শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

এক ফলে ছয় বিষ

মির্জা মেহেদী তমাল

এক ফলে ছয় বিষ

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় কেমিক্যালযুক্ত ১০০ মণ খেজুর ও ৮ মণ কমলা সরবরাহের দায়ে দুই ফল ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব খেজুর ও কমলা জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনাকারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ১০০ মণ খেজুর সরবরাহের অপরাধে মুন ট্রেডার্সের মালিক জুলফিকার আনামকে ৩০ হাজার ও ৮ মণ কমলা সরবরাহের দায়ে ভাই ভাই ফল ভান্ডারের মালিক আবদুল লতিফকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

শুধু খেজুর আর কমলাই নয়, বাজারের কলা, আম, পেঁপে, পেয়ারা থেকে শুরু করে আপেল, আঙ্গুর, নাশপাতিসহ দেশি-বিদেশি প্রায় সব ফলেই মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ ফল-মূলের উজ্জ্বল রং ক্রেতাদের নজর কাড়ে, সেগুলো বিক্রিও হয় বেশি দামে। তাই অপরিপক্ব ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড এবং তা উজ্জ্বল বর্ণে রূপান্তর করার জন্য অধিক ক্ষার জাতীয় টেক্সটাইল রং ব্যবহার হচ্ছে অবাধে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফল গাছে থাকা পর্যায় থেকে বাজারে বিক্রি করা মুহূর্ত পর্যন্ত এক একটি ফলে ছয় দফা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। মূলত গ্যাস জাতীয় ইথাইলিন ও হরমোন জাতীয় ইথরিল অতিমাত্রায় ¯ন্ডেপ্র করে এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করার কারণেই ফলগুলো রীতিমতো বিষে পরিণত হয়। ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেই ফলমূলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হয়। অন্যদিকে ফলমূল দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করতে ফরমালিনসহ আরও কিছু বিষাক্ত পদার্থেরও ব্যবহার চলে অহরহ। ইথাইলিন বা ক্যালসিয়াম কার্বাইড প্রয়োগের কারণে ২-৪ দিনের মধ্যেই ফল হলুদ রং ধারণ করে। বাস্তবে এসব ফল বাইরে পাকা মনে হলেও এর ভিতরের অংশে অপরিপক্ব থেকেই যায়। পরবর্তীতে সে ফলগুলো খাওয়ার কারণে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল, শুরু হয় নানা অসুখ-বিসুখ। অপরিপক্ব ফলমূলের স্বাদ-গন্ধ, ভিটামিনও অনেক কমে যায়। ফল পাকাতে যে বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তার নাম কার্বাইড।

গাজীপুর জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির উপ-পরিচালক (কৃষি সম্প্রসারণ ও গ্রামীণ অর্থনীতি) ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার তার এক প্রতিবেদনে বলেছেন, বাগান থেকে আম পাড়ার পর কমপক্ষে তিনবার বিভিন্ন রাসয়নিক দ্রব্য ¯ন্ডেপ্র করা হয়। রাতে গুদাম বন্ধ করার আগে ফরমালিন ¯ন্ডেপ্র করা হচ্ছে। ফলে ভোরে আমে ফরমালিনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না। তা ছাড়া অতিরিক্ত তাপে ক্যালসিয়াম কার্বাইড মেশানো আম রাখলে তা ক্যালসিয়াম সায়নাইডে পরিণত হতে পারে। যা অত্যন্ত মারাত্মক বিষ। কার্বোহাইড্রেটযুক্ত ফল চেনা অতটা কঠিন কিছু নয়, প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলে সমান (ইউনিফরম) রং হবে না, বোঁটার অংশে লালছে আভা রং হবে এবং ফল মিষ্টি হবে। কৃত্রিমভাবে পাকানো ফলে সব অংশে সমান রং হবে এবং ফলের ভিতরে চামড়ার অংশে একটু তিতা হবে। তাছাড়া ফলের এক অংশে টক অন্য অংশে মিষ্টি হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর