শনিবার, ১১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

পাউডার আর সুগন্ধিতে তৈরি হচ্ছে জনসন

মির্জা মেহেদী তমাল

পাউডার আর সুগন্ধিতে  তৈরি হচ্ছে জনসন

মানহীন পাউডারের সঙ্গে সুগন্ধি মিশিয়ে একের পর এক তৈরি হচ্ছে বিদেশি জনসন পাউডার। তাও আবার শিশুদের জন্য। পাশের রুমে তৈরি হচ্ছে নানা কেমিক্যাল আর সুগন্ধিতে তৈরি হচ্ছে প্যারাসুট নারকেল তেল। কেরানীগঞ্জের বড়িসুরে বাসাবাড়িতে গড়ে ওঠা কারখানায় এমনভাবে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী। চাহিদা অনুযায়ী এসব কারখানায় তৈরি হয় শ্রীলঙ্কার কুমারিকা, ভারতের আম্বলা, প্যারাসুট তেলসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নারকেল তেল আর প্রসাধনী। এসব স্থানে মুভ আর ফোঁড়া সারানো ভেটনোভেট ক্রিমও তৈরি হচ্ছে। আর এসব ভেজাল পণ্য চলে যাচ্ছে দেশের নামি-দামি বিপণিবিতানগুলোতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু ব্যক্তিগত লাভের কারণে এসব কারখানার মালিকরা এমন ভয়ঙ্কর অপরাধ করে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের উপ-পরিচালক মেজর আশরাফুল হক ও বিএসটিআইর কর্মকর্তা আবদুল হান্নানসহ র‌্যাব-১০-এর একটি টিম কেরানীগঞ্জ মডেল থানার নেকরোজবাগ ও পটকাজোরের তিনটি নকল প্রসাধনী কারখানায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই মাসের সাজা প্রদান করে। পরে তারা কারখানা তিনটি সিলগালা করে দেয়।

জানা গেছে, বিশ্বের নামি-দামি প্রসাধনী কোম্পানির নাম ও লোগো সংবলিত পিভিসি টিউব, স্টিকার, ক্যান ও বিভিন্ন সাইজের খালি মোড়ক চীন থেকে কনটেইনারযোগে আসছে চিটাগাং ও পানগাঁও পোর্টে। সেখান থেকে সেগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয় কেরানীগঞ্জের জিনজিরায়। তারপর সেসব টিউব, ক্যান ও মোড়কে নকল প্রসাধনী তৈরি করে ভরে ভেজাল প্রসাধনী কারখানার মালিকরা পাঠিয়ে দেন পুরান ঢাকার চকবাজারে। জিনজিরায় তৈরি এসব নকল প্রসাধনী চকবাজারের চম্পাতলী ও চুড়িহাট্টায় গোডাউনে রেখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করেন এক শ্রেণির অসাধু কসমেটিকস ব্যবসায়ী। প্রশাসন প্রায়ই কেরানীগঞ্জের এসব নকল প্রসাধনী কারখানায় অভিযান চালিয়ে মালিকদের জেল-জরিমানা করলেও স্থায়ীভাবে এসব কারখানা বন্ধ করতে পারছে না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জিনজিরায় বিভিন্ন স্থানে নিভিয়া, ভেসলিন, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী, ডাভ, সানসিল্ক, গার্নিয়ার, হিমালয়, ক্লিন অ্যান্ড ক্লিয়ার, পেনটিন, হ্যাভক প্রভৃতি নামিদামি ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনী তৈরি হচ্ছে। এসবের মোড়কে মেড ইন আমেরিকা, দুবাই, ইউকে, ভারত প্রভৃতি দেশের নাম লেখা রয়েছে।

চকবাজারের এর এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাজী একরাম উল্লাহ মার্কেট, ওয়াহেদ ম্যানশন, মুনসুর খান প্লাজা, দেলোয়ার প্লাজা, খান মার্কেট, তাজমহল মার্কেট, খাতুন মার্কেট, আশিক টাওয়ার, জাহাঙ্গীর মার্কেট থেকে নকল প্রসাধনী বিক্রেতাদের আটক করলেই জানা যাবে ওইসব মার্কেটে কারা নকল প্রসাধনী সাপ্লাই দিচ্ছে।

চকবাজারের একজন প্রসাধনী আমদানিকারক জানান, সরকার চট্টগ্রাম ও পানগাঁও নৌ পোর্টে আসা কনটেইনারগুলো আটকে দিলে নকল প্রসাধনী তৈরি বন্ধ হবে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ দিয়ে তাদের ধরা যাবে না কারণ তারা নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়ে নকল প্রসাধনী কারখানা মালিকদের সহযোগিতা করে থাকে।

সর্বশেষ খবর