শনিবার, ১৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলছে না মধ্যবিত্তের

তিনগুণ বেতন বাড়ার পরও সংসার চলছে না

জিন্নাতুন নূর

শাহেদ কায়সার একটি এনজিওতে ১২ হাজার টাকায় মধ্যম সারির একটি পদে কাজ শুরু করেন। তার পরিবারে বর্তমান চারজন সদস্য। ভাড়া থাকেন মিরপুরে পল্লবী আবাসিক এলাকায়। তিন রুমের যে বাসায় তিনি ভাড়া থাকেন এক দশক আগে সেখানে আট হাজার টাকায় উঠেছিলেন। বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পেয়ে এক দশকে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার। এ সময়ে শাহেদের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৬ হাজার। কিন্তু বেতন তিনগুণ বৃদ্ধি পেলেও এই টাকায় মাস চালাতে হিমশিম খান শাহেদ। তার নেই কোনো সঞ্চয়। বেতনের উল্লেখযোগ্য অংশই চলে যায় বাড়ি ভাড়ার পেছনে। খাবারের জন্য তাকে মাসে আরও খরচ করতে হয় ১৫ হাজার টাকা। দুই বাচ্চার লেখাপড়ার জন্য দুই হাজার। আর অবশিষ্ট তিন হাজার টাকা অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। শাহেদের মতো ঢাকায় বসবাসকারী মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা এভাবেই তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। ধার-দেনা করে দিন পার করে দিচ্ছেন। রোজার আগেই বাজারে খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে গিয়ে পাঁচশ টাকা ভাঙাতেই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। আবার রাজধানীর ভাড়া বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এই বাড়ির মালিকরা ইচ্ছা মতো যখন তখন ভাড়া বৃদ্ধি করছেন। ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর তথ্যে, গত অর্থবছরে জীবনযাত্রার ব্যয় ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে পণ্য ও সেবার মূল্য ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায় আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে চিকিৎসাসেবার ব্যয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যুরোর বাড়িভিত্তিক আয়-ব্যয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে বাংলাদেশে গড় পারিবারিক আয় ৪৫% বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৯৪৫ টাকায়। আর ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে খরচ বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৩৯%। যা দাঁড়ায় ১৫,৭১৫ টাকা। ক্যাব-এর তথ্যে, ২০০৬ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ঢাকায় বাড়িভাড়া প্রতি বছর বেড়েই চলছে লাগামহীনভাবে। একজন সাধারণ মানুষ তার মোট আয়ের অর্ধেক বা তার বেশি খরচ করে বাড়ি ভাড়ার পেছনে। ২০০৬ সালে দুই রুমের একটি বাসার ভাড়া ছিল সাড়ে তিন হাজার টাকা বর্তমানে সেই ভাড়া কমপক্ষে ১৬ হাজার টাকা। বস্তিবাসীর ঘরভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে দুই হাজার ৫শ টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের নির্দিষ্ট কোনো বেতন কাঠামো নেই। আর এ কারণে তাদের আয়-ব্যয়ের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য নেই। এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণির বেতন কাঠামো বৃদ্ধির জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও কোনো রকম গবেষণা কার্যক্রম নিতে দেখা যায়নি। মূলত এটি মধ্যবিত্তদের বেতন আশানুরূপভাবে বৃদ্ধির না পাওয়ার অন্যতম কারণ।  বাড়ি ভাড়ার সঙ্গে আবার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মতো নাগরিক সেবার মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যাপ্ত সেবা না পেয়েও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে বিরক্ত ঢাকাবাসী। সর্বশেষ সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে দুই বার্নারের চুলার জন্য গ্যাসের দাম ৮শ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১২শ টাকা আর এক বার্নারের দাম ৭৫০ থেকে ১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আবার গত বছরের মাঝামাঝি থেকে উৎপাদন খরচ ও পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে রাজধানীতে ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধি করা হয়। এতে আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম সাড়ে ১০ টাকার পরিবর্তে ১১ টাকা ২ পয়সা দিতে হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর