সোমবার, ২০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাগরে তেল-গ্যাস খুঁজছে সরকার

১০ বছরের মধ্যে ভয়াবহ গ্যাস সংকটের শঙ্কা, ১২ বছরের আগে মিলবে না ২২টি ব্লকের গ্যাস

শামীম আহমেদ

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অবশেষে মাল্টি ক্লায়েন্ট সিসমিক সার্ভের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে শিগগিরই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান TGS-SCHLUMBERGER JV-এর সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। গত ৭ মে পেট্রোবাংলা প্রতিষ্ঠানটিকে (DOA- declaration of award) চিঠি দিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। আগামী নভেম্বরের আগেই চুক্তি সম্পন্ন করতে চায় পেট্রোবাংলা। এর পর দুই বছরে জরিপ শেষ করবে প্রতিষ্ঠানটি। সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করবে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলার এক্সপ্লোরেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, TGS-SCHLUMBERGER JV-এর সঙ্গে চুক্তি করতে ৬ মে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পেয়ে পরের দিনই আমরা তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। তাদের সঙ্গে আলোচনার পর নোয়া (Notice of award) দেওয়া হবে। দুই বছরে ৩১ হাজার লাইন কিলোমিটার জরিপ করবে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর পেট্রোবাংলাকে প্রতিবেদন জমা দেবে। এ জন্য বাংলাদেশকে কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না। সংগৃহীত তথ্য তেল-গ্যাস কোম্পানির কাছে বিক্রি করে তারা খরচ তুলবে। বাড়তি আয় পেট্রোবাংলার সঙ্গে ভাগাভাগি হবে। জুলাইয়ের মধ্যে চুক্তি করে আগামী নভেম্বরের মধ্যে আমরা জরিপ শুরু করাতে চাচ্ছি। এর মধ্যে জরিপের জন্য পরিবেশ অধিদফতর থেকে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ) প্রতিবেদন নিতে হবে। মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভে হলে সাগরে গ্যাসের অস্তিত্বের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যাবে। তখন অনুসন্ধানে আগ্রহী হবে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ প্রসঙ্গে বুয়েটের অধ্যাপক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ম. তামিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর পরই মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভের উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল। তাহলে ২০১৬ সালেই প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যেত। এতদিনে অনুসন্ধান কাজ অনেক দূর এগিয়ে যেত। তবে দুই বছর পর তারা যদি বিশ্লেষণ করা তথ্য দেয় তাহলে সামনের কাজ সহজ হবে। সূত্র জানায়, মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির সাত বছর ও ভারতের সঙ্গে পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভেতে আটকে ছিল সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান। এর মধ্যে ভারত ও মিয়ানমার সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের পর উত্তোলন ও রপ্তানি করছে। বাংলাদেশ সাগরের ২৬টি ব্লকের তিনটি (এএস-৪, এসএস-৯, এসএস-১১) ২০১৪ সালে ও একটি (ডিএস-১২) ২০১৭ সালে বিদেশি কোম্পানিকে বরাদ্দ দেয়। বিডার (অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান) না পাওয়ায় বাকি ২২টিতে হাতই দিতে পারেনি। বরাদ্দ দেওয়া চারটি ব্লকে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপে গ্যাসের অস্তিত্ব মিললেও এখনো কোনো অনুসন্ধান কূপ খনন হয়নি। এসব ক্ষেত্র থেকে গ্যাস পেতেও আরও ৪-৫ বছর লেগে যাবে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলার একটি সূত্র। এছাড়া গতানুগতিক ধারায় চললে বাকি ২২ ব্লক থেকে গ্যাস পেতে ১২ বছর পার হয়ে যাবে। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, শুধু মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভেতে লাগবে দুই বছর। এরপর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান, যাচাই-বাছাই, চুক্তি, অনুসন্ধান, কূপ উন্নয়ন, গ্যাস উত্তোলন, সেই গ্যাস সাগর থেকে পাইপ লাইনে আনা- এসব করতে আরও ৮-১০ বছর লেগে যাবে। আর নতুন গ্যাস না মিললে এই সময়ের আগেই শেষ হয়ে যাবে গ্যাসের বর্তমান মজুদ। তখন ভয়াবহ গ্যাস সংকটে পড়বে দেশ। চার-পাঁচগুণ দামে আমদানি করে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে হবে। বর্তমানে (জানুয়ারি, ২০১৯) দেশে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ আছে ১১.৪৭ টিসিএফ। গত এক বছরে উত্তোলন হয়েছে ১.০৭ টিসিএফ। চাহিদা না বাড়লে এই গ্যাসে ১১ বছর চলার কথা। তবে শিল্পোন্নয়নের কারণে বছরে ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ধরলে সাড়ে সাত বছরে ফুরিয়ে যাবে বর্তমান মজুদ।

সর্বশেষ খবর