মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

দিন ফুরাচ্ছে পাটের

নিজস্ব প্রতিবেদক

দিন ফুরাচ্ছে পাটের

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ মেয়াদে শ্রমিকদের বাড়ি থেকে ডেকে এনে পাটশিল্পে কাজে লাগানো হলেও, সেই উদ্যোগে এখন ভাটা পড়েছে। উল্টো বেতন-ভাতার দাবিতে রাজপথে নামতে হয়েছে সরকারি পাটকল কর্মীদের। ফলে সারা বিশ্বে যখন পাটের সুদিন ফিরে আসছে, তখন অব্যবস্থাপনা ও বৈচিত্র্যহীনতার কারণেই বাংলাদেশে পাটের সুদিন ফুরিয়ে যাচ্ছে। ফের গভীর সংকটে পড়েছে বাংলাদেশের পাটশিল্প। পলিথিন নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতায় দেশের অভ্যন্তরে পাটের ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন আন্তর্জাতিক বাজারে কমছে বাংলাদেশের সোনালি আঁশের চাহিদা। বেসরকারিভাবে পরিচালিত জনতা জুট মিলের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হকের মতে, সংখ্যা ও আয়তন উভয় দিক থেকেই বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ কমে গেছে। এটা এ সেক্টরের জন্য অত্যন্ত খারাপ একটি সংকেত। জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বে পাটের সুদিন আবার ফিরে এসেছে। এমনকি বাংলাদেশেও বেসরকারি পাটকলগুলো ভালো করছে। পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয়ও ছিল উল্লেখযোগ্য। পাট থেকে  তৈরি হচ্ছে ২৩৫ রকমের আকর্ষণীয় ও মূল্যবান পণ্য। পাট থেকে  তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পচনশীল পলিথিন। প্লাস্টিক পলিথিন দেশে ও বিদেশে যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে, তা প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সে অবস্থায় বিকল্প হিসেবে পাটের পলিথিন ব্যবহারের অত্যুজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্ববাজারে পাটের ব্যাগের চাহিদা রয়েছে ৫০০ বিলিয়ন পিস। এর ১০ শতাংশ বাজার দখল করতে পারলে বছরে আয় করা সম্ভব ৫০ হাজার কোটি টাকা।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশ বিশ্বের মোট পাটের ৫০ শতাংশ উৎপাদন করে। বিশ্বের  মোট কাঁচা পাট রপ্তানির ৭৮.৫৪ শতাংশই হয় বাংলাদেশ থেকে। পাট খাতের বৈশ্বিক রপ্তানি আয়ের ৭২ শতাংশ এখন বাংলাদেশের দখলে। অন্যদিকে ভারত ৪৯ শতাংশ কাঁচা পাট উৎপাদন করলেও তারা কাঁচা পাট রপ্তানি করে না। অর্থাৎ ভারত স্থানীয়ভাবে পাটের ব্যবহার ও বহুমুখীকরণে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশের বেসরকারি পাটকলগুলো  যেখানে ক্রমাগত লাভের মুখ দেখছে।

কিন্তু বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি ২২টি পাটকল ক্রমাগত  লোকসান দিচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবসে বিজেএমসির এহেন লোকসান দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাটকলগুলোর লোকসান হয়েছে ৪৬৬ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লোকসানের পরিমাণ ৩৯৫ কোটি টাকা। পাটকল শ্রমিক নেতৃবৃন্দের মতে, সরকারি পাটকলের লোকসানের অন্যতম কারণ কাঁচা পাট কেনায় চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি। মিল কর্তৃপক্ষ পাট কেনে দেরিতে এবং বেশি দামে। এ ছাড়াও সরকারি পাটকলের উৎপাদন ক্ষমতা কম, উৎপাদনে খরচ বেশি, যন্ত্রপাতি পুরনো ও মজুরি বেশি। এ ছাড়া চট ও চটের বস্তা ছাড়া আর কিছু তৈরি করতে পারে না সরকারি পাটকলগুলো। জগদ্দল পুরনো অবকাঠামোর এই আমলাতান্ত্রিক বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে সরকারি পাটকলগুলোর ভবিষ্যৎ নেই বললেই চলে।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, জুলাই মাসে পাট কেনার মৌসুম হলেও সরকারের কর্মকর্তারা টাকা ছাড়ে দেরির অজুহাতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে গিয়ে পাট কেনেন। ফলে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় যে পাট কেনা যায়; তা শতভাগ বেশি দিয়ে ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকায় ক্রয় করেন। তিনি বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, পাট ক্রয়ের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা ঠেকানো না গেলে দেশের সম্ভাবনাময় এই শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ কম। দেশে ৭৮টি বেসরকারি পাটকল লাভজনকভাবে চলতে পারলে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা সরকারকে চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কেন। নিশ্চয়ই এর পেছনে বিশেষ কোনো কারণ রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর