দেরিতে শুরু, তার ওপর সার্ভার হ্যাং, এর সঙ্গে অকার্যকর ই-টিকিটিং ব্যবস্থা- এমনসব অব্যবস্থাপনা দিয়ে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি। বারবার সার্ভার ডাউনের কারণে প্রচন্ড গরমে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। এদিকে ভোগান্তি কমাতে এবং যাত্রীসেবার মান বাড়াতে এবারই প্রথম ঢাকার পাঁচটি স্থান থেকে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। তবে প্রথম দিনেই অভিযোগের কমতি ছিল না। টিকিট বিক্রি কার্যক্রম তদন্তে দুদকের একটি প্রতিনিধি দলও কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শনে যায়। এর কিছুক্ষণ পর রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনও পরিদর্শন করে ই-টিকিটিং-এর অব্যবস্থাপনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি প্রায় ২০ মিনিট টিকিট বিক্রি কার্যক্রম দেখেন এবং যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিএনএসবিডি কাঙ্খিত সেবা দিতে ব্যর্থ। এটা আমাদের ঘাড়েও আসে। পাঁচ দিনের সময় দেওয়া আছে তাদের। আজকের টিকিট সে পাঁচ দিনের মধ্যে দিয়ে দেবে। পাঁচ দিনের মধ্যে দিতে না পারলে আমরা সেটা কাউন্টারে দিয়ে দেব।’ দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্টেশন কর্মকর্তা তাকে জানিয়েছেনÑ সার্ভার ডাউন হয়ে যাচ্ছে। তাই টিকিট পেতে একটু সমস্যা হচ্ছে। সার্ভার ডেভেলপমেন্টের কাজ চলছে। আমরা তাদের বলেছি, যেন কোনো কালোবাজারি না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে। কালোবাজারি হলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রেলের আগাম টিকিট বিক্রির প্রথমদিন ছিল গতকাল। অথচ কমলাপুরে চিত্রটা বিগত বছরগুলোর তুলনায় ছিল আলাদা। যাত্রী চাপ থাকলেও ছিল না সেই উপচে পড়া ভিড়। কমলাপুর ছাড়াও রাজধানীতে আরও চারটি স্থানে আগাম টিকিট দেওয়ায় বাড়তি চাপ কমেছে বলে জানিয়েছে স্টেশন সংশ্লিষ্টরা। এরপরও কাক্সিক্ষত টিকিট হাতে পেয়ে সেই চিরচেনা উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। সুমন নামে একজন বলেন, টিকিট হাতে পেয়ে মনে হচ্ছে সোনার হরিণ পেয়ে গেলাম। ইয়াসিন নামে আরেকজন বলেন, এখন তো আর কষ্ট নেই, টিকিট পেয়েছি এটাই বড় কথা। অনলাইনে অ্যাপসের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রির কথা থাকলেও তা কিনতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। সার্ভার হ্যাং হওয়ায় বিক্রি বেশ কিছুক্ষণের জন্য স্থগিত থাকায় ক্ষোভ জানান তারা। আনোয়ার নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) থেকেই অনলাইনে ঢুকতে পারছি না। অ্যাপস বা ওয়েবসাইটেই হোক- কোনোটায়ই ঢোকা যায়নি। জানা গেছে, কমলাপুরে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, খুলনা, পার্বতীপুর ও পঞ্চগড়ের টিকিট দেওয়া হয়। গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া থেকে দেওয়া হয় সিলেট ও কিশোরগঞ্জের টিকিট, বনানী এবং তেজগাঁও স্টেশন থেকে দেওয়া হয় জামালপুরের টিকিট। এ ছাড়াও বিমানবন্দর স্টেশন থেকে দেওয়া হয় নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের টিকিট। কাউন্টার থেকে টিকিট পেতে অনেক যাত্রী কমলাপুরে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন মধ্যরাতেই। ৩১ মে’র টিকিট পেতে আগেভাগেই রেলস্টেশনে ভিড় করেন প্রত্যাশীরা। গরমের মধ্যেও রেলস্টেশনে কষ্ট করে রাত কাটিয়েছেন তারা। একজন টিকিট প্রত্যাশী বলেন, সন্ধ্যার পরে ইফতারি করেই এখানে চলে এসেছি। তার কারণ সিরিয়াল না হলে টিকিট পাওয়া যাবে না। টিকিট পেলে এই কষ্ট আর থাকবে না। বরং না পেলে খারাপ লাগবে। গতকাল কমলাপুর টিকিট কাউন্টারের সামনের প্লাটফর্মে গিয়ে দেখা গেছে, তিন যুবক ১ জুনের টিকিটের জন্য বেলা ১২টা থেকে সিরিয়াল দেওয়া শুরু করেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা রাজশাহীর ধূমকেতু কিংবা পদ্মা এক্সপ্রেসের টিকিট কাটবেন। ঈদের প্রত্যাশীত টিকিট যেন পেতে পারেন- তাই পরিচিতদের নিয়ে খাতা-কমলসহ একটু আগেই স্টেশনে চলে এসেছেন। রাজশাহীর এলাকার সব টিকিট কাটতে আসা সব প্রত্যাশীর নাম ও মোবাইল নম্বর তারা খাতায় লিখে সিরিয়াল দিচ্ছেন।
রংপুরের জন্য স্পেশাল টেন নেই : রংপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ঈদ সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন রুটে আট জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। তবে বিভাগীয় নগরী রংপুরের জন্য একটিও নেই। এ ছাড়া একমাত্র আন্তনগর রংপুর এক্সপ্রেসে বাড়তি কোনো বগি লাগানোরও সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি। ফলে রাজধানী থেকে রংপুরে ঈদ করতে ঘরে আসা এবং আবার কর্মস্থলে ফিরে যাওয়া মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে আট জোড়া স্পেশাল ট্রেনের মধ্যে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে এক জোড়া, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে দুই জোড়া, মৈত্রী রেল দিয়ে স্পেশাল হিসেবে চলবে খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে। এ ছাড়া ঢাকা-ঈশ্বরদী-ঢাকা রুটে একটি, লালমনিরহাট-ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে একটি, শোলাকিয়া স্পেশাল-১ ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটে ঈদের দিন, শোলাকিয়া স্পেশাল-২ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে ঈদের দিন স্পেশাল ট্রেন হিসেবে চলবে। ঈদের পাঁচ দিন আগে অর্থাৎ ৩১ মে থেকে ট্রেনের কোনো ডে অফ থাকবে না। এ সময় ৪৮টি বিশেষ ট্রিপ পরিচালিত হবে।রেল সূত্র জানায়, রংপুর এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, নীলসাগরসহ ৪২টি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করছে উত্তরাঞ্চলে। এসব ট্রেনে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ যাত্রী যাতায়াত করেন। প্রতিটি ট্রেনে কমপক্ষে বগি থাকে ৯টি। উত্তরাঞ্চলের এসব ট্রেনে প্রতিদিন ১৬ থেকে ১৭ হাজার যাত্রী রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন।
রেলওয়ের একটি সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীসংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। যাত্রী চাপ কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হয় বিশেষ ট্রেনের। কিন্তু এ বিশেষ ট্রেনের বরাদ্দের বেলা বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। অথচ ঢাকা থেকে ঈদ করতে ঘরে ফেরে বেশি উত্তরাঞ্চলের মানুষ। যার বড় অংশটি রংপুর বিভাগের আট জেলার।
রংপুর রেলস্টেশন সুপার শোভন রায় জানান, ঈদ উপলক্ষে রংপুরে এখন পর্যন্ত কোনো বাড়তি ট্রেনের সুবিধা পাওয়া যায়নি। রংপুর এক্সপ্রেসে এখন ৯টি বগি নিয়ে চলাচল করছে। ঈদ উপলক্ষে আলাদা বগি বাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।