শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুর্ভোগ ভোগান্তি কাটেনি

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্ভোগ ভোগান্তি কাটেনি

মানুষের হাতের মুঠোয় রেল টিকিট পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও দুর্ভোগের আরেক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে রেলের ই-টিকিটিং সেবা। এমন নানা সমস্যা ছাপিয়েও গতকাল কমলাপুর স্টেশনে রেলের আগাম  বিক্রির তৃতীয় দিনে টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় জনসমুদ্রে রূপ নেয়। গতকাল ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের ২ জুনের টিকিট দেওয়া হয়। এসব টিকিট নিতে কেউ লাইনে দাঁড়িয়েছেন মধ্যরাতে, কেউবা ভোরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি লাইন এঁকে বেঁকে স্টেশনের বাইরে চলে যায়।    স্টেশনের ১৯ নম্বর কাউন্টারের সামনে থাকা এক নারী বলেন, অনলাইনে টিকিট কেনার জন্য চেষ্টা করেছি, দেখি সার্ভার বন্ধ। অনলাইনে কোনো টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে কাউন্টারে এসেছি টিকিট নিতে। অ্যাপে প্রবেশ করতে না পারা, পর্যাপ্ত টিকিট না থাকা, টিকিট না দেখানোসহ অনেক অভিযোগ অ্যাপ ব্যবহারকারী টিকিট প্রত্যাশীদের। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনলাইন কিংবা অ্যাপ সমস্যার রহস্য এখনো কাটেনি। অথচ ঢাকা থেকে ৩৩টি আন্তঃনগর এবং গতকাল থেকে বিক্রি শুরু হওয়া চারটা বিশেষ ট্রেনসহ ৩৭টি ট্রেনের ১৪ হাজার ২৩৪টি টিকিট অনলাইনে কিংবা অ্যাপে বরাদ্দ রয়েছে। আর বাকি ১৩ হাজার ৯৮৬টি টিকিট বিক্রি হচ্ছে কাউন্টার থেকে। এখন সাধারণ যাত্রীদের মনে প্রশ্ন, অনলাইনে অনেক চেষ্টার পরও কেউই টিকিট কাটতে পারছেন না, তাহলে মোট টিকিটের অর্ধেকের বেশিই অনলাইনে বরাদ্দ থাকা টিকিটগুলো যাচ্ছে কোথায়? এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি স্টেশন-সংশ্লিষ্টরা।   কমলাপুরে টিকিট কিনতে আসা কয়েকজন যুবক এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের চালু করা অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কেনা যাচ্ছে না। তাই তারা টিকিট কিনতে ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়েও ভোগান্তিতে পড়েন তারা। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ।  সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গতকাল ভোরে আসা টিকিট প্রত্যাশীদের কেউ কেউ পত্রিকা বিছিয়ে লম্বা সারিতে থাকাবস্থায় মেঝেতেই ঝিমুচ্ছিলেন। কেউ আবার দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে পাশেই মেঝেতে বসে পড়েন। বনলতা এক্সপ্রেসের টিকিট নিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে কমলাপুর স্টেশনে সারিবদ্ধ হন আবদুস সোবহান নামে এক ব্যক্তি। টিকিট ছাড়ার প্রায় ৭ ঘণ্টা আগে এসেও তিনি ৭০ জনের পরে গিয়ে দাঁড়ান। এতজনের পরে থেকে কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রত্যাশিত টিকিট পাবেন কিনা তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এ প্রতিবেদককে বলেন, টিকিট বিক্রি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জানা গেল এসির টিকিট শেষ। আজ (গতকাল) মনে হয় সবচেয়ে বেশি মানুষ টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছে।  কমলাপুর স্টেশন সূত্র জানায়, অনলাইনে ঈদের সময় একসঙ্গে প্রায় দেড় লাখ হিট পড়ে। তবে সিএনএসবিডির যে সক্ষমতা তাতে মাত্র ২০ হাজার লোড নিতে পারে। সে কারণে সাধারণ মানুষের অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট পেতে ভোগান্তি হচ্ছে। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক জানান, কাউন্টারের প্রতিটি লাইনে মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। এ ছাড়া ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রিতে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একজন যাত্রী জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট নিতে পারবেন। আজ শনিবার ৩ জুনের এবং আগামীকাল রবিবার ৪ জুনের আগাম টিকিট দেওয়া হবে। এ ছাড়া ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ২৯ মে থেকে। চলবে ২ জুন পর্যন্ত। যাত্রীদের সুবিধার্থে কমলাপুর ছাড়াও অন্য আরও চারটি স্থান থেকে বিক্রি হচ্ছে ট্রেনের আগামী টিকিট। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাতায়াতকারী ১৬টি ট্রেনের আগামী টিকিট বিক্রি হচ্ছে কমলাপুর থেকে। বিমানদবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী ৭টি আন্তঃনগর ট্রেনের, তেজগাঁও স্টেশন থেকে জামালপুরগামী ৫টি ট্রেনের, বনানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ রুটের দুটি ট্রেনের এবং ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলভবন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জ রুটের ৭টি আন্তঃনগর ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর