শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর

সেবাকেন্দ্রে সেবা নেই ভোগান্তির অন্ত নেই

আকতারুজ্জামান

কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরে এসে ন্যূনতম সেবা পাচ্ছেন না শিক্ষক-কর্মচারীরা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এ কার্যালয়ে ‘সেবাকেন্দ্র’ নামে একটি বুথ আছে। সেখানে লেখা রয়েছে ‘কারিগরি সেবায় সর্বদা নিয়োজিত’। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে সেবাকেন্দ্রে সেবা দেওয়ার কেউ থাকেন না। সরেজমিন গিয়ে এসবের প্রমাণ মিলেছে। দেখা গেছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেবা নিতে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন কারিগরির শিক্ষক ও কর্মচারীরা। অনেক ক্ষেত্রে অধিদফতরের অধীন অন্য অফিসে গিয়েও কর্মকর্তাদের পাওয়া যায় না। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে এসে প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে ভোগান্তির অন্ত থাকে না শিক্ষক-কর্মচারীদের। তাদের দুর্ভোগ-দুর্দশা দেখার কেউ নেই।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আগামী বছরের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার হার ২০ শতাংশ ও আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু অধিদফতরে এসে শিক্ষক-কর্মচারীরা সেবা না পেলে সরকারের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন কারিগরি শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তথ্যমতে, এসএসসি, এইচএসসি, ডিপ্লোমা ও ডিগ্রি স্তরে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের অধীনে। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এক হাজার ৮৩৬টি। টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ রয়েছে ৬৪টি। সারা দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটও এ অধিদফতরের অধীনেই। সবমিলে লাখ লাখ মানুষ এ অধিদফতরের ওপর নির্ভরশীল। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানের কাজে এ অধিদফতরে এসে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহান। তাছাড়া যথাসময়ে অফিসে আসেন না কর্মকর্তারা। অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিতে ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী এই বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেন না বলেও জানান অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী। কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক রওনক মাহমুদ বলছেন, অধিদফতরের বিভিন্ন দাফতরিক কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যস্ত ছিলেন, আর কিছু জনবল ছুটিতে থাকায় হয়তো কর্মস্থলে কয়েকজন ছিলেন না। সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরে গিয়ে দেখা যায়, নাটোরের লালপুরে বরমহাটী সমবায় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক রোকেয়া খাতুন এসেছেন। সকালে বাস থেকে নেমে সোজা এসেছেন অধিদফতরে। কিন্তু বেলা ১১টা পর্যন্ত তিনি সেবাকেন্দ্রে কাউকে পাননি। দিনাজপুরের কাহারোলের জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ফিরোজ সরকার ও মো. লিটন এসেছেন এমপিওভুক্তির এক আবেদন জমা দিতে। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আবেদন জমা নেওয়া কর্মকর্তাকে না পেয়ে বসে ছিলেন। বরগুনা থেকে আসা মাজহার উদ্দিন টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনিও সেবাকেন্দ্রে কাউকে পাননি। এ প্রতিবেদকের কাছে অধ্যক্ষ অভিযোগ করে বলেন, আগে পাথরঘাটার সৈয়দ ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। পরে মাজহার উদ্দিন কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার পর তিন মাসের বেতন-ভাতা পাননি। এ ব্যাপারে অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করে দফায় দফায় যোগাযোগ করলেও কোনো সমাধান পাননি তিনি। এ ছাড়া সম্প্রতি অধিদফতরের সংস্থাপন শাখায় ৩০৪ নং কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো কর্মকর্তা আসেননি। আইসিটি শাখার ৩১৫ নং কক্ষেও দেখা গেছে কোনো কর্মচারী-কর্মকর্তা নেই সেখানেও। এলওসির অধীনে বিদ্যমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয়ে (৪১৬ নং কক্ষে) গিয়েও দেখা গেছে, সেখানেও কেউ আসেননি বেলা ১১টা পর্যন্ত। অধিদফতরে কথা হয় রংপুর থেকে আসা এক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, অধিদফতরের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় সেবা দিতেও কার্পণ্য করেন। ভালো ব্যবহারও করেন না তারা। সেবা পেতে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। অনেক কর্মকর্তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না দফতরে। কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক রওনক মাহমুদ এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, অধিদফতরের সেবাকেন্দ্রে একজন সার্বক্ষণিকভাবে থাকার কথা। এখানে কেউ দায়িত্ব ফাঁকি দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরে সেবা নিতে এসে কেউ যদি হেনস্তা বা ভোগান্তির শিকার হন এমন অভিযোগ পেলে অভিযুক্তকে ছাড় দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তি আমি নিজে হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর