মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফাগুনের পরিবারে কান্না থামেনি

অজ্ঞান পার্টির একজন গ্রেফতার

শেরপুর প্রতিনিধি

ফাগুনের পরিবারে কান্না থামেনি

শেরপুরের তরুণ সাংবাদিক ফাগুন খুন হয় সাত দিন আগে। ছেলেকে হারানোর বেদনায় ফাগুনের মা-বাবার কান্না থামছেই না। ফাগুনের বন্ধুরা বাসায় এলেই ওদের ধরে ফাগুনের মা-বাবার আজাহারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। কোনো সান্ত্বনাই মা-বাবার কান্না থামাতে পারছে না। ইহসান ইবনে রেজা ওরফে ফাগুন ঢাকা থেকে প্রচারিত নিউজ পোর্টাল প্রিয় ডটকমের সাব এডিটর ছিলেন। সাংবাদিকতার সঙ্গে ফাগুন  তেজগাঁও কলেজে ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের স্নাতক ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ফাগুন সাপ্তাহিক শেরপুরের সম্পাদক, প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাঁকন রেজার বড় ছেলে। ফাগুনের দাদা আবদুর রেজ্জাক ছিলেন শেরপুর থেকে প্রথম প্রকাশিত সাপ্তাহিক শেরপুরের সম্পাদক। ফাগুন সর্বশেষ ২২ মে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজে ইন্টারভিউ দিয়ে বিকালে কমিউটার ট্রেনে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত পৌনে ৮টা নাগাদ ময়মনসিংহ পৌঁছে বাবার সঙ্গে ফাগুনের শেষ কথা হয়। এর পর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। ওই রাতেই জামালপুর রেলওয়ে পুলিশ ময়মনসিংহ-জামালপুর রেলপথের নান্দিনা রানা গাছা মধ্যপাড়া রেললাইনের কাছ থেকে ফাগুনের লাশ উদ্ধার করে। লাশের কোনো পরিচয় না পাওয়ায় বুধবার দুপুরে ময়নাতদন্ত করে জামালপুর আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুপুর ২টার দিকে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে জামালপুর পৌর গোরস্তানে দাফনের জন্য নিয়ে গেলে লাশটি ফাগুনের হতে পারে সন্দেহ হয়। পরে খবর পেয়ে ফাগুনের স্বজনরা লাশ শনাক্ত করে। ময়নাতদন্তে ফাগুনের গলা ও মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন আছে বলে জানা গেছে। লাশ পাওয়ার পর থেকেই তরুণ এই সাংবাদিকের করুণ মৃত্যু শেরপুরে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়। তরুণ এই সাংবাদিককে কেন, কীভাবে, কারা হত্যা করল ইত্যাদি প্রশ্নের শেষ নেই। সর্বদা হাসিখুশি এই তরুণের হারিয়ে যাওয়া নিয়ে সব মহলে এখনো শোকের রেশ আছে। এর আগে ২৩ মে পুলিশ বাদী হয়ে অপমৃত্যু মামলা করলেও ২৫ মে ফাগুনের বাবা বাদী হয়ে জামালপুর জিআরপি থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এদিকে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন অজ্ঞান পার্টির সদস্য জামালপুর জেলার ইলামপুরের রবিউল ইসলাম চান খাঁ ওরফে পাংখা নামে একজনকে গ্রেফতার করে গতকাল ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। তরুণ এই সাংবাদিককে কেন বা কারা হত্যা করল এর জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। হত্যার সময় ফাগুনের সঙ্গে ল্যাপটব, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, প্রিয় ডটকমের পরিচয়পত্র ও কিছু টাকা ছিল। এসবও উদ্ধার হয়নি। হত্যার প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও সূত্র জানিয়েছে, একটি ডেভেলপার কোম্পনির অনিয়ম ও দুর্নীতির  খবর-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই কোম্পানি অনেক সুবিধা দিতে চাইলেও ফাগুন গ্রহণ করেননি। হত্যার কারণ যাই হোক, ফাগুনের লাশ পাওয়ার পরে জামালপুর জিআরপি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শেরপুরের সুধী সমাজ।

ফাগুনের বাবা কাঁকন রেজার দাবি, ফাগুন হত্যাকা  একটি পরিকল্পিত হত্যাকা । আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। যে বা যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের ধরে আইনের কাছে সোপর্দ করা হোক। আমার ছেলে তো চলে গেছে। আমি অন্তত জানতে চাই কারা তাকে হত্যা করল, আমার ফাগুন কী এমন অপরাধ করেছিল যার জন্য তাকে এভাবে হত্যার শিকার হতে হলো!’ জামালপুর রেলওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (জিআরপি)। তাপস চন্দ্র পি ত বলেন হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশের সব দফতর একযোগে কাজ করছে। যে যে কারনে ফাগুনকে হত্যা করা হতে পারে প্রত্যেকটি বিষয় সামনে নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে অজ্ঞান পার্টির একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর