বুধবার, ২৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

ওমরাহ ভিসায় আরব ছুটছে রোহিঙ্গারা

পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহে সহায়তা করছে জনপ্রতিনিধিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্টেই ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব ছুটছে। কৌশলে দেশের বিভিন্ন শহর ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে ম্যানেজ করে এবং প্রভাবশালীদের সহায়তায় নিজেদের পরিচয় গোপন করে এসব পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র সংগ্রহ করছে রোহিঙ্গারা। পরে সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব ছুটছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশই সেখানে অবৈধ বসবাস শুরু করে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে বলে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এতে সৌদি শ্রমবাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে বলে জানান কয়েকজন সৌদি প্রবাসী। এদিকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে সৌদি আরব পাড়ি জমানোর সময় সম্প্রতি শতাধিক রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমানবন্দরেও এই আটকের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ২৫ মে রাতেও শাহজালাল বিমানবন্দরে ৩ নারীসহ ৭ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। বিদেশে গিয়ে রোহিঙ্গারা চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে জনশক্তি রপ্তানি ও বিদেশে কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস সৌদি আরবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ ও জনশক্তি রপ্তানি কমে গেছে। এতে দিন দিন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সও কমে যাচ্ছে বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। অবশ্য এসব অভিযোগের ব্যাপারে রোহিঙ্গা নেতা আবু সিদ্দিক জানান, কিছু রোহিঙ্গা বিদেশে থাকা তাদের আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় সৌদি আরব যাচ্ছে এ কথা ঠিক, তবে তা সংখ্যায় সামান্য। এতে উদ্বেগজনক কিছু হচ্ছে না। এদিকে অসাধু কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ভুয়া নাম, ঠিকানা ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিস ও থানাকে ম্যানেজ করে পাসপোর্ট বানিয়ে রোহিঙ্গাদের পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইদানীং পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র বানানোর ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ঠিকানা ব্যবহার করছেন না। কারণ হিসেবে জানা গেছে, এ দুই জেলায় পুলিশ ছাড়পত্র প্রাপ্তি ও পাসপোর্ট অফিসগুলো রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে অধিকতর যাচাই-বাছাই ও তৎপর রয়েছে। কোনো এজেন্সি যদি অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে ১৫ জন রোহিঙ্গাও বিদেশে পাঠাতে পারে এবং তারা যদি ফেরত নাও আসে তাতে এজেন্সির ক্ষতি নেই। কারণ বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত  রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ও ফিরতি এয়ার টিকিট ওইসব দালাল ও এজেন্সির লোকেরা সংগ্রহ করে ফেলেন। রোহিঙ্গাদের সৌদি আরব গমনের ব্যাপারে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের আশ্রিত আজিজুর রহমান জানান, গত দেড় বছরে বিভিন্ন দাতা দেশের সহায়তায় প্রায় ১৩০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ডসহ বেশকয়েকটি ইউরোপীয় দেশে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এসব পুনর্বাসিত রোহিঙ্গার প্রেরিত অর্থে তাদের নিকটাত্মীয়রা স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে হজ ও ওমরাহ হজের নামে সৌদি আরবে চলে যাচ্ছে। বিদেশে অবস্থান করলেও এখানে শরণার্থী শিবিরে বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর প্রদত্ত যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা তাদের পরিবারের অন্যরা ভোগ করছে বলেও জানান তিনি। জানা গেছে, উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়ার নিবন্ধিত (পুরনো) রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের অধিকাংশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশি এনআইডি কার্ডধারী হয়ে গেছে, অনেকে পাসপোর্টও করে ফেলেছে। ১৯৯২ থেকে শরণার্থী হিসেবে অবস্থানের সুযোগে বাংলাদেশের সর্বত্র তাদের চেনা-জানা। অনেকের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনসহ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবানসহ বিভিন্ন এলাকার  লোকজনের সঙ্গে নানাভাবে সামাজিক সম্পর্কও গড়ে উঠেছে।  রেজিস্টার্ড ক্যাম্প দুটোর শত শত রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে অবস্থান করছে ও ক্যাম্পে যাতায়াত করছে বলে জানা যায়।

সর্বশেষ খবর