বুধবার, ২৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বেঁচে যাওয়া বেলালের মুখে ইতালি যাত্রার রোমহর্ষক বর্ণনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

দালালের খপ্পরে পড়ে সাগরপথে ইতালি যেতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু সাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৯ জন। এর বেশির ভাগই বাংলাদেশের সিলেটের। তবে এ দুর্ঘটনায় পড়া ৭৫ জনের মধ্যে ভাগ্যের জোরে বেঁচে ফিরেছেন ১৪ জন। এর মধ্যে আছেন সিলেটের কয়েকজন। সরকারি উদ্যোগে তিউনিসিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন তারা।

এদেরই একজন ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুর মোহিদপুরের বেলাল আহমদ। সম্প্রতি বাড়ি ফিরে স্বপ্নের ইতালি যাত্রার রোমহর্ষক বর্ণনা শুনিয়েছেন তিনি। বেলাল আহমদ বলেন, দালাল এনামুল হকের সঙ্গে তিনিসহ ফেঞ্চুগঞ্জের চারজন চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। কথা ছিল বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে সেখান থেকে সরাসরি ফ্লাইটে তাদের ইতালি পৌঁছে দেবেন দালালরা। এমন চুক্তিতে স্বপ্নের ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন তারা। যাত্রার শুরুতে তাদের নেওয়া হয় কলকাতায়। কলকাতা থেকে দিল্লি এবং পরে দিল্লি থেকে নেওয়া হয় মুম্বাই। বেশ কিছুদিন তাদের ভারতের এই জায়গাগুলোয় রেখে নেওয়া হয় শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কায় কয়েক দিন থাকার পর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কাতারে। কাতার থেকে লিবিয়া। তখনো বুঝতে পারছিলেন না তারা বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। পরে লিবিয়া থেকে যখন দালালরা তাদের বলেন, তিউনিসিয়ার মিশরাতা এয়ারপোর্টে নিয়ে যাবেন, তখন তারা বুঝতে পারেন যে তাদের সামনে মহাবিপদ। পরে তাদের তিউনিসিয়ার মিশরাতা এয়ারপোর্টে নেওয়া হয় এবং সেখানে তাদের পাসপোর্ট জিম্মি করে ফেলা হয়। এয়ারপোর্ট থেকে বের করে তাদের একটি ছোট কক্ষে আটকে রাখা হয় এবং দেশ থেকে এনামকে টাকা দেওয়ার জন্য তাদের মারধর করা হয়। পরে তাদের পরিবারের লোকজন এনামের সঙ্গে টাকা লেনদেন করেন। সেখান থেকে আরও প্রায় ৪০ জনসহ দালালরা তাদের নিয়ে যান লিবিয়ার ত্রিপোলি। প্রায় এক মাস সেখানে রেখে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। এ সময় তাদের মারধর করে সঙ্গে থাকা মোবাইল, টাকা ও অন্য জিনিসপত্র লুটে নেওয়া হয়। মারধরে বেলাল আহমদের মাথাও ফেটে যায় বলে তিনি জানান। কিছুদিন পর তাদের নেওয়া হয় জোয়ারা নামক একটি স্থানে। ভ্যানে করে ৮২ জনকে সেখানে রাখা হয়। ৮২ জনের খাবারের জন্য ১২ কেজি চাল দিতেন দালালরা। এর মধ্যে সপ্তাহে দুই দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে। প্রায় চার মাস এভাবে কাটাতে হয় তাদের। কোনো সময় খাবার চাইলে বেধড়ক মারধর করতেন তারা। ৬ মে সোমবার রাতে তাদের ২০ জনকে গাড়িতে করে নেওয়া হয় মরুভূমিতে। বিভিন্ন দেশের আরও ৫০ জনকে নেওয়া হয় সেখানে। মরুভূমিতে কোনো খাবার ছাড়াই তাদের দুই দিন রাখা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে সবাইকে একসঙ্গে করে মরুভূমি, পাহাড়, জঙ্গলের ভিতর দিয়ে সাগরের তীরে নিয়ে নৌকায় তোলেন দালালরা। কিছু দূর যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে যায়। চোখের সামনে তলিয়ে যান বেশির ভাগ যাত্রী। এ সময় তার সামনে সাগরের বুকে হারিয়ে যান তার ভাতিজা লিটন আহমদ। পরে তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন তিউনিসিয়ার জেলেরা। ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন তারা। বাকিরা বেশির ভাগই তলিয়ে যান সাগরে। আর যেন কোনো লোক এভাবে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে জীবন না হারান এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান বেলাল আহমদ। একই সঙ্গে এসব দালালকে রুখতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর