মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

রুশ ইকোনমিক ব্লকে কী পাবে বাংলাদেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ইউরাশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চুক্তির ফলে সদস্য দেশগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়া, সিরামিকসহ প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্য শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশের সুযোগ মিলতে পারে। পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বৈধ পথে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগও সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার কোনো ব্যাংকিং সম্পর্ক নেই। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপন হতে পারে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ১৯৯১-৯৩ সালে যে ১১টি দেশ হয়, এগুলোকে একসঙ্গে বলা হয় কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্টস স্টেটস (সিআইএস)। তার মধ্য থেকে পাঁচটি দেশ রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, আরমেনিয়া এবং কিরগিজস্তানকে নিয়ে ইউরাশিয়ান ইকোনমিক কমিশন (ইইসি) গঠিত হয়। ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে রুশ নেতৃত্বাধীন এই অর্থনৈতিক ব্লক।

গত ৩১ মে ইইসির সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক ১৯টি খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে এমওইউ স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। সহযোগিতার খাতগুলো হলো- বাণিজ্য সুবিধা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা, কৌশলগত নীতি, কাস্টমস নীতি ও প্রক্রিয়া, শাকসবজি রপ্তানির বাধা দূর করতে স্যানিটারি এবং ফাইটোস্যানিটারি নির্মূলে সহায়তা, আর্থিক বাজার, যোগাযোগ, জ্বালানি নীতি, কৃষিশিল্প প্রতিযোগিতামূলক নীতি, শিল্প, মেধাস্বত্ব, বাণিজ্য ও সেবা খাতে বিনিয়োগ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, তথ্য ও প্রযুক্তি সহায়তা, সরকারি ক্রয়প্রক্রিয়া, শ্রম রপ্তানি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক ও সমঝোতামূলক খাত।  প্রশ্ন হলো-এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ এসব খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে কতটা লাভবান হবে? বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি বলেন, এতে করে রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পথ উন্মুক্ত হবে। দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকার রাশিয়ায় শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধার বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করে। ওই সময়কার বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে আলোচনা করতে রাশিয়া সফর করেন। জানতে চাইলে সাবেক সচিব ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওই সময়ে আমরা রাশিয়ায় গিয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধার জন্য দেন-দরবার করেছিলাম। রাশিয়া জানাল, বাংলাদেশকে সুবিধা দিতে তাদের আপত্তি নেই। তবে তারা যেহেতু ইইসি কাস্টমস ইউনিয়নের সদস্য, সে কারণে শুল্ক সুবিধার বিষয়ে একা রাজি থাকলেই হবে না, অন্যদেরও সম্মতি থাকতে হবে। বিশেষ করে অনুমোদন লাগবে ইউরাশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের নির্বাহী কমিটির।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শফিকুল ইসলাম বলেন, ইইসির আওতায় সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কাস্টমস ইউনিয়ন গঠিত হওয়ায় তাদের কোনো কাস্টমস বর্ডার নেই। ফলে কোনো প্রকার শুল্ক-কর পরিশোধ ছাড়াই এক দেশ অন্য দেশে বাধাহীনভাবে পণ্য বাণিজ্য করতে পারে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও সদস্য দেশ একই শুল্ক হার এবং অভিন্ন বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করে থাকে। ফলে এই সমঝোতা চুক্তির ফলে রাশিয়াসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে একই ধরনের বাণিজ্য সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইইসির আওতায় মোট ২ কোটি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১৮ দশমিক ২৭ কোটি জনগণ বসবাস করে। এ অঞ্চলের জিডিপি (GDP) ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ২৭ হাজার মার্কিন ডলার। বিশ্বের চাষযোগ্য জমির ১৪ শতাংশ এ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। এ অঞ্চলে গম, তুলা, ভুট্টা ইত্যাদি উৎপাদন হয় এবং ইউরিয়া সার, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, কেমিক্যালস ও খনিজের অন্যতম প্রধান উৎস। এ অঞ্চলে বিশেষ করে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, ওষুধ, আলু এবং সবজির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে রাশিয়ায় কিছু পরিমাণে তৈরি পোশাক, পাট, হিমায়িত চিংড়ি এবং আলু রপ্তানি হলেও এর পরিমাণ বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব হবে। রাশিয়াসহ ইইসির দেশগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে এবং বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই সমঝোতা স্মারকটি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

সর্বশেষ খবর