মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে রাজধানী

আলী আজম

কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে রাজধানী

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীতে নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার বিপুল সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয়। ডিএমপি ও র‌্যাবপ্রধানের বিশেষ নির্দেশনা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে। নেওয়া হয়েছে বাড়তি নজরদারিও। থাকবে চেকপোস্ট। সন্দেহভাজন ব্যক্তি, গাড়ি, ব্যাগ মেটাল ডিটেকটর, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও ম্যানুয়াল চেকিংয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। রাজধানীতে পুলিশের ৮টি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনাররা এবং র‌্যাবের ৫টি ব্যাটালিয়নের অধিনায়করা নিজ নিজ এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করবেন। পোশাকধারী ছাড়াও সাদা পোশাকের পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা মাঠে থাকবেন। ঢাকা মহানগরীর সবকটি প্রবেশ ও বহির্গমন পথে বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এ নিরাপত্তা বলবৎ থাকবে। পুলিশ-র‌্যাব সূত্র বলছে, কূটনৈতিক ও মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় পুলিশের নজরদারি থাকছে। গুলশান ও বারিধারার সব দূতাবাস এবং সংলগ্ন সড়কে থাকছে বাড়তি গোয়েন্দা নজরদারি। তবে ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। জাতীয় ঈদগাহ মাঠে থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা। থাকছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ঈদগাহের চারপাশে চেকপোস্ট থাকবে। সেগুলো ভেদ করেই মুসল্লিদের আসতে হবে। একই সঙ্গে ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের বিশেষ টিম সোয়াত, মোটরসাইকেলে টহল, ফুট পেট্রোল, অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক চেকপোস্ট ও তল্লাশি চৌকি থাকছে রাজধানীজুড়ে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, আড়তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ডাকাত, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টি ধরতে পুলিশ ও  র‌্যাবের বিশেষ টিম মাঠে সক্রিয় রয়েছে।

ঈদে ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে রাতের বেলায় বাড়ানো হবে পুলিশি টহল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ও রেল স্টেশনে। পুরান ঢাকা ছাড়াও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার জুয়েলারি মার্কেটে থাকবে পুলিশের কড়া নজরদারি। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ফোর্স থাকবে। সাদা পোশকেও নজরদারি থাকবে বিনোদন কেন্দ্রে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছর দুটি ঈদে অসংখ্য মানুষ ঢাকা ত্যাগ করেন। এর ফলে ঈদের ছুটিতে রাজধানী অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। বাসাবাড়ি ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় চুরিও বাড়ে। রাস্তাঘাট ফঁাঁকা থাকায় ছিনতাইকারীরা তৎপর হয়। তাই ঈদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত মার্কেট কেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ঈদের দিন ঈদগাহ কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। ঈদের পরবর্তী বাসাবাড়ি, শপিং মল ও জুয়েলারি দোকানগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া, ঈদের দিন জাতীয় ঈদগাহ মাঠে মন্ত্রিপরিষদের অনেক সদস্য ও প্রধান বিচারপতিসহ ভিআইপিরা নামাজ পড়তে আসেন। তাই জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জায়নামাজ ও ছাতা নিয়ে আসা যাবে। তবে নিরাপত্তার খাতিরে পুলিশ দেখতে চাইলে দেখাতে হবে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, ঈদে ফাঁকা শহরগুলোতে যেন কোনো অপরাধ না ঘটে, সে বিষয়ে তাদের আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে। চেকপোস্ট, পেট্রোল, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পিকআপ, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে টহল থাকবে। ঈদে যারা বাড়িতে যাবে তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য রাজধানীতে মোতায়েন থাকবে। বাড়িতে যাওয়া ও ঢাকায় ফেরা মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের টহল, চেকপোস্ট ও ব্লক রেইড থাকবে। বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং ট্রেন স্টেশনে পুলিশ কাজ করছে। অন্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

সর্বশেষ খবর