শনিবার, ৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঈদের ছুটিতে সড়কে নিহত ৪৬ আহত পাঁচ শতাধিক

ফাঁকা রাস্তায় গতি যুদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদের ছুটি। রাস্তা ফাঁকা। বেপরোয়া যানবাহন। যে যার মতো গতি নিয়ে ছুটছে। এ যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র। এ যুদ্ধে কেউ হার মানতে নারাজ। ফলে কেউ গন্তব্যে যেতে পেরেছেন, কেউবা জীবনটাই হারিয়েছেন। আবার কেউবা পঙ্গুত্ববরণ করে অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। হতাহতের পরিবারে ঈদের আনন্দের বদলে নেমে এসেছে অন্ধকার। ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরদিন সারা দেশে শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়ই নিহত হয়েছেন ২২ জন। আহত হয়ে কেবল পঙ্গু হাসপাতালেই এসেছেন প্রায় ৫০০ জন। সব মিলিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরেছে ৪৬ জনের। পঙ্গু হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে ঈদের তিন দিনে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন ৪৮৬ জন। এর মধ্যে ৩১৩ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। এ ছাড়া ১৭৩ জনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। কারও পা, কারও হাত, কারও শরীরের একাধিক স্থানে ভেঙে গেছে। কেউবা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ভাঙাসহ গুরুতর জখম হয়েছেন। গতি ওঠানো ও অসতর্কতার কারণে এসব দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছে পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ঈদের ছুটির কারণে রাজধানী ঢাকা একেবারে ফাঁকা। নেই ট্রাফিক সংকেত আর যানজটের বাধা। এ সুযোগে যে যার মতো ছুটিয়ে দিয়েছেন গাড়ি। ফলে দুর্ঘটনা বেড়েছে। পঙ্গু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সুজিত কুমার সাংবাদিকদের জানান, জরুরি বিভাগে ঈদের আগেই প্রতিদিন ৩০০-এর মতো রোগী আসছেন। যেভাবে দুর্ঘটনা বাড়ছে এর প্রতিকার প্রয়োজন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ঈদের ছুটিতে শুধু বাইক দুর্ঘটনায় সারা দেশে মারা গেছেন ২২ জন। পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি আহত নুরুজ্জামান জানান, ঈদের ছুটি পেয়ে ৪ জুন ভোরে মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মোহাম্মদপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। বাড়ি খুব কাছে যেতে বেলা ১১টার দিকে আলগামনের (একটি যান) সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তার ডান পায়ের তিনটি স্থানে ভেঙে গেছে। এর পরই স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এতে তার পরিবারের ঈদের আনন্দ ভেস্তে গেছে। পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি আহত ইমন হোসেন জানান, তিনি রাইড শেয়ারিং করেন। ৬ জুন একজন যাত্রী নিয়ে মহাখালী থেকে সাতরাস্তার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে বেলা ১০-১১টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের লাভ রোড মোড়ে বিজয় সরণি থেকে আসা একটি প্রাইভেট কার তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে তার ডান হাতের কাঁধের হাড় সরে গেছে। মুখের ডান পাশ ও ডান পা ছিলে গেছে। কেমনে কী হলো তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। ৬ জুন রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে মাত্র ২ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যু হয়। ওইদিন দুপুরে ফ্লাইওভারের সালাউদ্দিন হাসপাতালের কাছে ইমন (২২) এবং দুই ঘণ্টা পর ফ্লাইওভারের ধলপুর ঢালে রিয়াজ আহমেদ কাওছার (১৮) মারা যান। তারা দুজনই দ্রুতগতিতে ফ্লাইওভার দিয়ে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এ দুর্ঘটনার শিকার হন।

মৃত রিয়াজের বন্ধু সোহাগ জানান, রিয়াজের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার জালকুড়িতে। ৬ জুন সকালে তারা মোটরসাইকেলযোগে শনিরআখড়া যান। সেখান থেকে বিকাল ৩টার দিকে রিয়াজের অসুস্থ মামাকে দেখতে মুগদায় যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার সায়েদাবাদ জনপথ বরাবর ওপর দিয়ে ধলপুরগামী ঢাল দিয়ে নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিয়াজ মারা যান।

মৃত ইমনের বন্ধু সোহাগ ও নাসিম জানান, ৬ জুন ইমনসহ তারা তিন বন্ধু মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। দুপুর ১টার দিকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর সালাউদ্দিন হাসপাতালের কাছে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তারা রাস্তার ওপর ছিটকে পড়েন। পরে তিনজনকেই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমন মারা যান। ইমনের বাবার নাম জেরিন মিয়া। তিনি বাবার সঙ্গে শনিরআখড়ার শেখদি বটতলায় থাকতেন। সিদ্ধেশ্বরী কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন ইমন। ৫ জুন ঈদের দিন রাতে হাতিরঝিলে একটি প্রাইভেট কারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী মো. ইমন সরকার (২১) ও পারভেজ হোসেন জয় আহত হন। দুর্ঘটনার পরপর পথচারীরা তাদের দুজনকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমনকে মৃত ঘোষণা করেন। ঈদের দিন রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে দুই বন্ধু হাতিরঝিলে ঘুরতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। ইমনের বাবার নাম কামাল সরকার। তাদের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের বোর্ডবাজার বড়বাড়ী এলাকায়। ৬ জুন ঈদের পরদিন বেলা ২টার দিকে মিরপুর ১১ নম্বরের প্রধান সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পরিস্থান পরিবহনের একটি মিনিবাস ধাক্কা দিলে চারজন আহত হন। তাদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার জেরে বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাসের আগুন নিভিয়ে ফেলেন।

ডিএমপি ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের এসি (মিরপুর জোন) ফাতেমা ইসলাম জানান, মিরপুর বাঙলা স্কুলের পাশে মিরপুর সড়কে পরিস্থান পরিবহনের একটি মিনিবাস সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি একটি রিকশার ওপর আছড়ে পড়ে। এতে রিকশায় থাকা দুই যাত্রীসহ রিকশা ও অটোরিকশার চালক আহত হন। বাসের ধাক্কায় অটোরিকশা ও রিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। উত্তেজিত জনতা পরিস্থান পরিবহনের বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

প্রাণ ঝরল ৪৬ জনের : ঈদের ছুটিতে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে সড়কপথে ৪৬ জনের প্রাণ ঝরার খবর পাওয়া গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিরাজগঞ্জ : চালকদের গাফিলতি ও বেপরোয়া গতির কারণে ঈদের ছুটিতে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে ঝরেছে তরতাজা ৯ প্রাণ। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ কাটাতে যাওয়ার সময় সিরাজগঞ্জের মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় এ নয়জন প্রাণ হারান। দুর্ঘটনায় প্রায় ৪৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কিসমত হলদিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে ফজলুল হক (৪০), একই উপজেলার তালুক সর্বানন্দা গ্রামের এলাহী বক্সের ছেলে শাহজাহান মিয়া (৩৫), কুটিপাড়া গ্রামের বুলু মিয়ার ছেলে হামিদুল ইসলাম (৪০), রংপুরের মির্জাপুরের মুহুরীপাড়া মহল্লার আবদুুর রহিমের ছেলে আতাউর রহমান (৩২); নেত্রকোনার বাসিন্দা ফারুক (৪০), চন্দন (৩৮); ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কলেন সরদিয়া গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা এমারুল হোসেন (৪২) ও প্রাইভেট কার চালক রুবেল (৪৫)।

পুলিশ জানায়, ঈদের আগের দিন ৪ জুন ভোরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের রায়গঞ্জ উপজেলার দথিয়া এলাকায় ঢাকা থেকে গাইবান্ধাগামী জারিফ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস দ্রুতগতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন মারা যান। আহত হন অন্তত ৩০ জন। ঈদের দিন বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে ৫ জুন মহাসড়কের রায়গঞ্জ উপজেলার ভুঁইয়াগাতী পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় একটি মুরগিবাহী মিনি ট্রাকের সঙ্গে একটি বড় ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মুরগির ট্রাকের চালক ফারুক ও হেলপার চন্দন আহত হন। উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনই মারা যান। একই দিন সকালে তবারিপাড়া এলাকায় ঢাকাগামী ডিপজল পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীতমুখী একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাসের হেলপারসহ আটজন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর বাসের হেলপার মারা যান। এ ছাড়া মহাসড়কের ষোলমাইল এলাকায় ঢাকাগামী আদর পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে ৭ যাত্রী আহত হন। ঈদের পরদিন সকালে হাটিকুমরুল- বনপাড়া মহাসড়কের উল্লাপাড়া উপজেলার হরিণচড়া বাজারে দ্রুতগামী একটি প্রাইভেট কার চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় খাদে পড়ে যায়। এতে কারে থাকা ব্যাংক কর্মকর্তা ও চালক নিহত হন।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদের জিলানী জানান, চালকদের গাফিলতির কারণেই সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। দুর্ঘটনায় নিহতের লাশ উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

ফরিদপুর : ফরিদপুর শহরতলির ধুলদি এলাকায় বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যাত্রীবাহী একটি বাস গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেলে ছয়জন যাত্রী নিহত হন এবং আহত হন কমপক্ষে ১৮ জন। বাসের যাত্রী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সাতক্ষীরাগামী একে ট্রাভেলস নামের যাত্রীবাহী বাসটি ফরিদপুরের ধুলদি রেলগেট এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলকে বাঁচাতে গিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে বাসটির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই বাসের ৪ যাত্রী নিহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরও ২ জন। নিহতরা হলেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার শাহাবুদ্দিন মৃধা (৩৫), মধুখালীর সুরমান মোল্লা (৩২), বোয়ালমারীর নয়ন শেখ (২২), মাগুরার মালেক মাঝি (৪৮), সাতক্ষীরার শাহরিয়ার আসাদ সৈকত (৪৮) ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তি (৪৫)। দুর্ঘটনার পর আহত ১৮ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের সেদিনই ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। এদিকে দুর্ঘটনার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধারকাজে অংশ নেন। দুর্ঘটনাকবলিত বাসের যাত্রীরা জানান, বাসচালক ঘুমিয়ে পড়ার কারণেই এ দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি এ এফ এম নাসিম জানান, নিহতদের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বগুড়া : ঈদের দিন সন্ধ্যায় পিকআপ চাপায় আহতদের মধ্যে কাশেম আলী (৪২) নামে একজন মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। কাশেম আলী বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কুন্দারহাট সড়কপাড়ার বাসিন্দা। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে নন্দীগ্রাম উপজেলার কুন্দারহাট বাসস্ট্যান্ডে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

জানা গেছে, কাশেম আলী তার ভ্যান গাড়িতে তিনজন যাত্রী উঠিয়ে আরও যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় একটি পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীসহ ভ্যান গাড়িকে চাপা দেয়। এতে পথচারী, ভ্যানচালক ও যাত্রীসহ ৪ জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভ্যানচালক কাশেম আলী মারা যান এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় এমদাদ হোসেন নামের একজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়। কুন্দারহাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরির্দশক কাজল কুমার নন্দী জানান, দুর্ঘটনার পরপরই পিকআপ ও তার চালক শফিকুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে।

ধামরাই (ঢাকা) : ঢাকার ধামরাইয়ে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। ঈদের দিন বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের বাথুলি বাসস্ট্যান্ডে বাস ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাইভেট কারের চালক বান্দু মোল্লা (৪০) নিহত হন। তিনি সাভার উপজেলার কাঠগড়া এলাকার রবিউল্লাহর ছেলে। ঈদের পরের দিন সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের কালামপুর বাসস্ট্যান্ডে মোটরসাইকেলের চাপায় আরশেদ আলী (৮০) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি ধামরাইয়ের চরডাউটিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ওইদিন বিকালেই ধামরাই থানা রোড এলাকার কলার ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন (৫৫) মহাসড়ক পার হওয়ার সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মারা যান। তার বাড়ি সাটুরিয়ার দরগ্রাম এলাকায়। এদিকে ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের জয়পুরায় দুই বাসের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

দিনাজপুর : দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের রামডুবি এলাকায় বাসের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। ঈদের আগের মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার রানীগঞ্জের আটবাড়ী গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে সবুজ (২৩) ও একই এলাকার আবদুল্লাহর ছেলে মমিনুল ইসলাম (২৪)।

পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আবদুুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

নরসিংদী : নরসিংদীতে যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষসহ পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। বুধবার ২টার দিকে সদর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভগীরথপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন আশুগঞ্জ বাহাদুরপুর গ্রামের আবদুল লতিফ মিয়ার ছেলে মামুন মিয়া (২০), মাধবদী আলগী গ্রামের তালিম মিয়ার ছেলে পাওয়ারলুম শ্রমিক আবদুুর রাজ্জাক (২৮)। পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকা থেকে তৃষা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস বি-বাড়িয়া যাচ্ছিল। গাড়িটি সদর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভগীরথপুর পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা মাধবদীগামী রংধনু পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও একজনের মৃত্যু হয়। এর আগে ১২টার দিকে শিবপুরের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজির সংঘর্ষে একজন মারা যান।

শ্রীপুর (গাজীপুর) : গাজীপুরের শ্রীপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক সজীব হোসেন (২৪) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও চার মোটরসাইকেল আরোহীসহ ৮ জন আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। নিহত সজীব উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের গাজিয়াড়ন গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। বুধবার বিকাল ৩টায় শ্রীপুর-সাতখামাইর সড়কের দুর্লভপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বরমী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রনি আকন্দ জানান, বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল সাতখামাইরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় একটি ছাগল হঠাৎ করে দৌড়ে সড়ক পার হওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় মোটরসাইকেল সড়কে পড়ে যায় এবং ওই মোটরসাইকেলের ৮ আরোহী আহত হন। স্থানীয়রা গুরুতর আহত চারজনকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সজীব মারা যান।

মোরেলগঞ্জ : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দ্রুতগামী দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে স্বপন সাহা (২৫) ও শাওন খান (২৮) নামে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২ জন। বুধবার রাত ৮টার দিকে বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কের মোরেলগঞ্জ মহিষপুরা ফাঁড়ির কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন পিরোজপুর পৌরসভার কুমারখালীর মহাদেব সাহার ছেলে স্বপন সাহা। পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একই এলাকার আবজাল খানের ছেলে শাওন খান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ইমন মিয়া (১৪) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। সন্ধ্যায় উপজেলার শ্রীরামপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ইমন উপজেলার ইবরাহিমপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে। নবীনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রণজিৎ রায় জানান, অটোরিকশায় করে ঘুরতে বের হয় ইমন। শ্রীরামপুরে সড়কের পাশে একটি গাছের সঙ্গে অটোরিকশাটির ধাক্কা লাগে। এতে গুরুতর আহত হয় সে। উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বরিশাল : বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি গ্রামে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থী নিহত এবং তার দুই বন্ধ আহত হয়েছেন। বুধবার ঈদুল ফিতরের নামাজের পর নিয়ামতিতে এ দুর্ঘটনায় নিহত তাওহিদুল ইসলাম একই এলাকার আবদুস সালাম মৃধার ছেলে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ওয়ার্ডমাস্টার মশিউর রহমান ফিরদাউস জানান, তাওহিদ ঈদের নামাজ পড়ে বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হন। চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাকবলিত হয়। এতে তারা ৩ জনই আহত হন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা শেবাচিম হাসপাতালে পাঠালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাওহিদকে মৃত ঘোষণা করেন।

চট্টগ্রাম : মার্কেট থেকে ঈদের পাঞ্জাবি কিনে বাড়ি ফেরার পথে পিকআপ ভ্যানের চাপায় নাসির উদ্দিন জীবন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার ভোররাতে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবনের মৃত্যু হয়। নিহত জীবন সীতাকুন্ড উপজেলার ভাটিয়ারী তুলাতলী এলাকার মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে।

চমেক হাসপাতালের পুলিশ কন্ট্রোল রুম জানায়, মঙ্গলবার রাতে মোটরসাইকেলে করে ঈদের পাঞ্জাবি কিনতে নগরে এসেছিলেন জীবন। পাঞ্জাবি কিনে বাড়ি ফেরার পথে একটি পিকআপ ভ্যান তার মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। মুমূর্ষু অবস্থায় চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সিলেট : সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর উপজেলার দক্ষিণ গোয়ালাবাজার ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায় যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে একজন নিহত ও অন্তত ৩০ যাত্রী আহত হয়েছেন। ঈদের আগের দিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিলেটগামী শাহজালাল পরিবহনের বাস এ দুর্ঘটনার শিকার হয়। খবর পেয়ে তাজপুর ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।

নিহত বাসযাত্রী খুর্শেদা বেগম (২০) সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার বেড়িগাঁও গ্রামের ফারুক মিয়ার স্ত্রী।

টাঙ্গাইল : ঈদের দিন ঘুরতে বের হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুজন। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন সজিব (১৪) ও আলিফ (১৭)। তাদের দুজনের বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার জীবনশ্বের গ্রামে। ঈদের দিন ওই গ্রামের ১৪/১৫জন কিশোর ও যুবক পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় ঘুরতে যাচ্ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন জানান, দুপুর দেড়টায় সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কে কালিহাতী উপজেলার সল্লা নামক স্থানে পিকআপ ভ্যানটির সঙ্গে ঢাকাগামী একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আলিফ ঘটনাস্থলে এবং সজিব টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে আনার পর মারা যান। এ দুর্ঘটনায় ১১জন আহত হন।

রংপুর : রংপুরের পীরগাছায় ট্রলি চাপায় শিহাব হোসেন (১১) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের তাম্ভুলপুর গ্রামে বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিহাব ওই ইউনিয়নের দক্ষিণ তাম্বুলপুর গ্রামের কাওসার মিয়ার ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১২টায় ইট বহনকারী একটি ট্রলি (কাঁকড়া) উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ তাম্বুলপুর গ্রামে পৌঁছলে শিশু শিহাবকে পেছন দিক থেকে চাপা দেয়। এতে শিশু শিহাব ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। ঘটনার পর পর ট্রাকটরটি দ্রুত পালিয়ে যায়।

সর্বশেষ খবর