রবিবার, ৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

এবার ঢাকামুখী জনস্রোত

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার ঢাকামুখী জনস্রোত

রাজধানীর সদরঘাটে গতকাল মানুষের ঢল -রোহেত রাজীব

ঈদের ছুটি শেষে আজ রবিবার খুলছে সরকারি অফিস-আদালত। আজ থেকেই চিরচেনা চেহারায় ফিরছে রাজধানী। আবার ছক বাঁধা জীবনে ফিরছে কর্মব্যস্ত নগরীর শ্রমজীবী-পেশাজীবীরা। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে গতকাল কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ভিড় ছিল ঢাকামুখী সড়ক, নৌ, রেলপথে। চাকরি-ব্যবসাসহ নানা কারণে ঢাকায় থাকা নাগরিকরা গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার জন্য অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে কংক্রিটের নগরী ছেড়ে যান। ঈদ ছুটির পর গতকাল রাজধানীমুখী মানুষের আগমন ছিল সবচেয়ে বেশি।

সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ছাড়াও বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থিত বাস কাউন্টারগুলো ফিরতি মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। যারা সপরিবারে ঢাকা ছেড়েছিলেন তারা বাড়িতে সবার সঙ্গে ঈদ করতে পেরে খুশি। গতকাল দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর প্রবেশ পথসহ বিভিন্ন সড়কে হালকা যানজট দেখা যায়। কয়েকটি দূরপাল্লার পরিবহন কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, রাতের গাড়িতে উপচে পড়া ভিড় রয়েছে, ভোরে ঢাকায় পৌঁছে তারা সকালেই কর্মস্থলে যোগ দেবেন।

গতকাল ভোর থেকেই সদরঘাট নৌ-টার্মিনালে মানুষের ভিড় ছিল অনেক বেশি। রাজধানীর অন্যতম প্রধান এই প্রবেশ দ্বার সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্ধ শতাধিক রুটের লঞ্চগুলোতে যাত্রীরা এসে সদরঘাটে পৌঁছে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ঢাকামুখী যাত্রীর ভিড় লক্ষ্য করার মতো। নির্দিষ্ট সময় পর পর লঞ্চ এসে টার্মিনালে থামলে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। কিন্তু যাত্রীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন টার্মিনালের বাইরে এসে। কারণ সেখানে যাত্রীদের তুলনায় রিকশা ও সিএনজির সংখ্যা কম থাকায় অনেকে বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে। ফিরতি পথে ভোগান্তি নিয়ে তেমন আপত্তি না থাকলেও নৌ-পথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করেছেন অনেকেই। লঞ্চ যাত্রীরা বলেন, জীবনে কখনো শুনছেন ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেনি? সরকার যাই নির্ধারণ করে দিক না কেন? কেউই তা মানেন না। তবে ফেরার পথে তেমন ঝামেলা হয়নি এটাই বড় কথা। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে লঞ্চ মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, ঈদে সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে তাই নেওয়া হচ্ছে।

গতকাল কমলাপুর স্টেশনে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতি মুহূর্তেই রাজধানী ফেরত যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে, জনস্রোত স্টেশন ছাড়িয়ে রাস্তাঘাটেও ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আন্তনগর একেকটি ট্রেন নিয়ে আসছে হাজারের বেশি যাত্রী। যাত্রীদের ভিড়ে ঢাকা পাচ্ছে তার আগের রূপ। ঈদ ছুটি শেষে সড়ক পথে তেমন কোনো ভোগান্তি ছাড়াই রাজধানীতে ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ। সকাল থেকেই গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে ছিল কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ভিড়। একদিকে যানজটমুক্ত সড়ক এবং অন্যদিকে বাড়তি ভাড়ার ঝামেলা না থাকায় স্বস্তিতে ঢাকায় ফিরতে পেরে খুশি যাত্রীরা। ফিরতি যাত্রায় কোথাও কোনো ধরনের যানজটের খবর মেলেনি। সব রুটের গাড়িগুলো শিডিউল অনুযায়ী যাত্রীদের নিয়ে ঢাকা ফিরছে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীবাহী বাসগুলোর বেশিরভাগই গাবতলী টার্মিনালে এসে থামে। এবার সড়কপথে যানজট কিংবা অতিরিক্ত ভাড়ার ঝামেলা না থাকায় শান্তিপূর্ণভাবে ঢাকায় ফিরতে পেরে খুশি যাত্রীরা। এদিকে ঈদের ছুটি কাটিয়ে জীবিকার তাগিদে ফেরা মানুষগুলোর রাজধানীতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তেমনি এক ভোগান্তির নাম যানবাহনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। লঞ্চঘাট থেকে বের হয়ে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যানবাহনের অভাব না থাকলেও ভাড়া চোখ কপালে ওঠার মতো। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাচালকরা যে যার মতো ভাড়া আদায় করেছেন যাত্রীদের কাছ থেকে। মোছা. নাবিলা চাঁদপুর থেকে ঢাকা ফিরেছেন। যাবেন মিরপুর-২। সিএনজি পাচ্ছেন, কিন্তু দামে মিলছে না। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, আমি মিরপুর-২ এ যাব। সিএনজি চালিত অটোরিকশাচালক ৪০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছেন। কী করি বলুন। ভাড়া শুনেই তো রাগ উঠে যাচ্ছে। আজ রবিবার থেকে আবারও শুরু হবে কর্মব্যস্ত ঢাকার চিরচেনা দৃশ্য। জীবিকাতাড়িত ঢাকাবাসী স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে ঢাকায় আসছে স্রোতের মতো। প্রথম কর্মদিবসের আগের দিন গতকাল তাই ঢাকায় ফেরার সব পথে ছিল তীব্র ভিড়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর