সোমবার, ১০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাতের আঁধারের ময়লায় ভরাট উত্তরা লেক

পিকআপে করে আনা হয় ময়লা, উৎকট গন্ধে বিপর্যস্ত জনজীবন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাতের আঁধারের ময়লায় ভরাট উত্তরা লেক

লেকের পাড়ে স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়েছে ময়লা। পাড় ঘেঁষে ফেলা ময়লায় ভরে যাচ্ছে রাজধানীর উত্তরা লেক। দুই মাস ধরে রাতের আঁধারে ময়লা ফেলা হলেও কারা এটা করছে তা জানে না সিটি করপোরেশন। লেকের পাড়ে ময়লা ফেলায় উৎকট গন্ধে বিপর্যস্ত হচ্ছে বসবাস ও যাতায়াতকারী মানুষের জীবনযাত্রা।

নগরজীবনের ক্লান্তি ভুলতে রাজধানীবাসী লেকের পাড়ে হাঁটতে, বেড়াতে, একটু শান্তির নিঃশ্বাস নিতে আসতেন। খোলা আকাশের নিচে ¯িœগ্ধ বাতাসের সন্ধান মিলত রাজধানীর উত্তরা ১৫ নম্বর ব্রিজ-সংলগ্ন লেকের পাড়ে। কিন্তু মনোমুগ্ধকর এ স্থানটি আর আগের মতো নেই। রাতের আঁধারে পিকআপে করে ময়লা ফেলে লেক ভরাট করতে উঠেপড়ে লেগেছে দখলদাররা।এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জলাধার পরিচ্ছন্ন এবং পানিপ্রবাহ বজায় রাখতে আমরা কাজ করছি। ময়লা ফেলে লেক ভরাট কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। কারা রাতের আঁধারে এই অপকর্ম করছে তা শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব ময়লা অপসারণ করে লেকের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করব।’ সরেজমিন উত্তরা লেকের ১৫ নম্বর ব্রিজ পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে লেকের পাড়ে সামান্য সময় দাঁড়ানো তো দূরের কথা, পাশের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লেক-সংলগ্ন স্থানীয় বালুর মাঠ এলাকার বাসিন্দারা। নাকে রুমাল চেপে রাস্তায় চলাচল করছেন পথচারীরা। ১২ নম্বর সেক্টরের কবরস্থানের পর থেকে লেকের পাড় দখল করে অবৈধ বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। অস্থায়ীভাবে টিনের ঘর তুলে দোকান বা গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অস্থায়ী দোকানগুলো একসময় স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে। লেকের পাড় থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতে প্রায় মাঝ বরাবর পর্যন্ত দখল হয়ে গেছে। এরপর সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বাঁশের আড়ত, ভাঙারির দোকান ও টংঘর। মাসভর মাইকিং করে সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পরদিনই আবার দোকান স্থাপন করা হয়। প্রায় ২০টির মতো দোকান গড়ে তোলা হয়েছে লেকের জায়গা দখল করে। দুই বছর আগেও এ জায়গা ফাঁকা ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এবার তার পাশেই ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করার চেষ্টা করছে দখলদাররা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের আঁধারে পিকআপে করে ময়লা ফেলা হয়। কে বা কারা লেকের পাড়ে আবর্জনা ফেলে যায় তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না। বালুর মাঠের বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, ‘রাতের আঁধারে পিকআপে ময়লা এনে ফেলা হয়। পিকআপগুলোর গায়ে কোনো কোম্পানির নাম নেই। দুই রাত ময়লা ফেলে যাওয়ার পর একদিন রাত ১০টার দিকে ময়লা ফেলতে দেখে আমরা এগিয়ে যাই। আমাদের হাঁকডাক দেখে দ্রুত দুর্বৃত্তরা পিকআপ নিয়ে পালিয়ে যায়। এর পর থেকে মাঝরাতে এসে তারা ময়লা ফেলে যায়। দুই মাস আগেও স্থানটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও ফাঁকা ছিল। হঠাৎ একদিন সকালে আমরা ময়লার স্তূপ দেখতে পাই।’ আঁধারে পিকআপ থেকে ময়লা ফেলতে দেখেছেন ওই এলাকার বাসিন্দা দেলাওয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকেই এ এলাকায় মানুষের যাতায়াত কমে যায়। মাস দুয়েক আগে রাত ১২টার পর ছয়-সাতটি পিকআপে করে দ্রুত ময়লা ফেলে চলে যেতে দেখেছি।’ লেকপাড়ের চা-দোকানি মো. সুজন বলেন, পাকুরিয়া এলাকার কিছু অসাধু লোক টাকার বিনিময়ে এসব অবৈধ কাজ করছে। ঈদুল ফিতরের রাতেও তারা মুরগির উচ্ছিষ্টাংশ ও আবর্জনা পিকআপে করে ফেলে গেছে। ১৪ ও ১৫ নম্বর সেক্টরের বেশ কিছু গার্মেন্টের পরিত্যক্ত ময়লা এখানে ফেলে যাওয়া হয়। বিভিন্ন কোম্পানির মেয়াদোত্তীর্ণ মালামালও এখানে ফেলে রেখে যায় তারা।’ এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ শরীফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘লেকের এই জায়গাটি দুই ওয়ার্ডের সীমানায় পড়েছে। এখনো সীমানার বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। তবে ময়লা ফেলে কারা লেক ভরাট করছে সে বিষয়ে আমি খোঁজ নেব। আগামীকাল ওই জায়গা পরিদর্শন করে ময়লা সরানোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সর্বশেষ খবর