মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
চাকায় পিষে যাত্রী হত্যা

চালক ভারতে পালানোর সময় গ্রেফতার

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুর সদর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘেরবাজারে বাসের ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডার জেরে যাত্রী সালাহউদ্দিনকে রাস্তায় ফেলে পিষে হত্যার ঘটনায় বাসের চালক ভারতে পালানোর পথে গ্রেফতার হয়েছেন। গতকাল দুপুরে পুলিশ তাকে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার দিঘারকান্দা এলাকার কংস নদ থেকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত ‘আলম এশিয়া’ বাসের চালক মো. রুকন উদ্দিন (৩৫) ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার লতিফপুর নোয়াপাড়া এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে। সন্ধ্যায় গাজীপুরের পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, যাত্রী সালাহউদ্দিনকে পিষে হত্যার পর চালক রুকন উদ্দিন প্রথমে মুক্তাগাছা পরে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, হালুয়াঘাট ও সবশেষে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পুলিশ ওই বাড়িতে উপস্থিত হলে তিনি পাশের নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর পুলিশ নদীতে নেমে তাকে জাপটে ধরে ফেলে। রুকন ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তার কাছ থেকে মামলার অন্য আসামিদের নাম ও অবস্থান জেনে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। একাধিক টিমের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, গোলাম সবুর, আমীনুল ইসলামসহ গাজীপুরে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

মাত্র ৫০ টাকার জন্য হত্যা করা হয় সালাহউদ্দিনকে : গাজীপুরে মাত্র ৫০ টাকার জন্য বাসযাত্রী সালাহউদ্দিনকে চালক ও তার সহকারীরা গাড়ি থেকে  ফেলে দিয়েছিল। তারপর তার ওপর চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাস। গত রবিবার সালাহউদ্দিনকে এভাবেই পিষে মারা হয়েছিল। এ ঘটনায় মাতম চলছে স্বজনদের মাঝে। গতকাল সকালে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার শীলপুর গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, শোকে স্তব্ধ নিহত সালাহউদ্দিনের শাশুড়ি। খরিয়া নদীর তীর  ঘেঁষে গড়ে ওঠা ছায়া সুনিবিড় শান্ত গ্রামটিতে যেন বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের বুক ফাটা কান্না আর আহাজারিতে ভারি শীলপুরের বাতাস। ঘড়ির কাঁটায় যখন সকাল সাড়ে ১০টা, তখন গাজীপুর  থেকে নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছেন নিহতের স্ত্রী পারুল আক্তার। ক্ষণে ক্ষণে মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। বিলাপ করে বলছিলেন স্বামীর সঙ্গে তার বিভিন্ন স্মৃতি কথা। বারবার বিচার চাইছিলেন স্বামীর ঘাতকদের। পারুলের বড় ভাই আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার ভগ্নিপতির কোনো বাড়িঘর নেই। কিছুদিন আগে আমাদের বাড়ির পাশে একটা জায়গা দেখাইয়া কইছিল- মরার পর এইখানে দাফন করার লাইগ্যা। অহন এইডাই হইলো। আমার বইন অহন কী নিয়া থাইকবো?’ পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত যাত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ ঢাকার আলু বাজারের মৃত শাহানউদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। স্থানীয় একটি কারখানায় গাড়ি চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রায় ১৮ বছর আগে এ গ্রামে বিয়ে করেন সালাহউদ্দিন। গত রবিবার ঈদের ছুটি শেষে ‘আলম এশিয়া’ পরিবহনে স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই ফিরছিলেন। ৬০০ টাকার স্থলে স্বামী-স্ত্রীর ভাড়া বাবদ মাত্র ৫০ টাকা কম দিতে চেয়েছিলেন আলম এশিয়া বাসে চড়া সালাহউদ্দিন দম্পতি। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বাসের হেলপার। চলন্ত বাসেই সে নাজেহাল করে ওই দম্পতিকে। সালাহউদ্দিন নিজেকে চালক পরিচয় দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত গাজীপুরের বাঘেরবাজারে চালকের সহকারী লাথি দিয়ে ফেলে  দেয় তাকে। পরে বাসের চাকায় পিষ্ট করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চালক। হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ওই চালক। নিহত সালাহউদ্দিনের স্ত্রীকে বাসে নিয়েই ছুটে চলে চালক। পরে তাকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

 ঘটনাস্থল থেকে আরও পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাস থামিয়ে সটকে পড়ে বাসের চালক ও সহযোগীরা।

সর্বশেষ খবর