মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ছাত্রদল নিয়ে তোপের মুখে বিএনপি

গণঅনশন করবেন বিলুপ্ত কমিটির নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্রদল নিয়ে তোপের মুখে বিএনপি

ঈদুল ফিতরের একদিন আগে ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করায় ক্ষোভের মুখে পড়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ সিদ্ধান্তকে তারা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। এর প্রতিবাদে এবং ধারাবাহিক কমিটি গঠনের দাবিতে আজ থেকে গণঅনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে। ছাত্রদলের অনেক নেতা-কর্মী বলেছেন, কমিটি গঠন নিয়ে তাদের মতামত পুরোপুরিভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এতে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের মুখে পড়েছে। এর জন্য ছাত্রদলের কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে গঠিত ১০ সদস্যের সার্চ কমিটি দায়ী বলে মনে করেন তারা। এর বাইরে দলের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতাও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভুল বুঝিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছেন। তাই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাদের প্রতিও বিক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে এর জন্য তারাই দায়ী থাকবেন বলে নেতা-কর্মীরা জানান।

গত সোমবার রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করা হয়। এতে বলা হয়, আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হবে। ছাত্রদলের অনুষ্ঠেয় কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশে অবস্থিত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে। কেবল ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে যে কোনো বছরে এসএসসি অথবা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এর আগে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের জন্য ৩১ মে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা স্বল্পমেয়াদি কমিটি গঠনের বিষয়ে মতামত দেন। বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন। ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা কমিটি গঠনে তাদের লিখিত দাবিসমূহ উপস্থাপন করেন। এতে ছাত্রদলের কমিটি গঠনে বয়সের কোনো সীমারেখা নির্ধারণ না করে স্বল্পমেয়াদে আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত একটি কমিটি গঠন এবং পরের কমিটিকেও এক বছরের স্বল্পমেয়াদে গঠন করে ছাত্রদলের নেতৃত্বের জট কমানোর দাবি করা হয়। ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের এসব দাবি উপেক্ষা করে ৩ জুন রাতে মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটিকে বাতিল করা হয়। এতে নতুন কমিটি গঠনে আগামী দেড় মাসের মধ্যে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। তবে এই দেড় মাস ছাত্রদলকে পুরো অস্তিত্বহীন করা হয়েছে। কাউন্সিলর কারা হবেন, পদপ্রত্যাশীরা কোন প্রক্রিয়ায় কার সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে মনোনয়ন জমা দেবেন, সংগঠনের দাফতরিক কাজ কীভাবে সম্পন্ন করা হবে তার কোনো সিদ্ধান্ত বা কৌশল নির্ধারণ না করে পুরো কমিটিকে বিলুপ্ত করে দেওয়ায় নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ডকে। সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা জানান, সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছাত্রদল কাগজে-কলমে থাকলেও এর পুরো প্রক্রিয়ায় বিএনপির খবরদারি চলছে। বিগত আন্দোলনে এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রায় প্রত্যেক নেতা-কর্মীর নামে একাধিক মামলা রয়েছে। দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দেওয়ার পর এখন তাদের ছুড়ে ফেলা হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। ছাত্রদলের জন্য এখন হঠাৎ করে বয়সের সীমারেখা নির্ধারণ করা হলেও যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয় না।

সর্বশেষ খবর