মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

পরিবেশ মামলার বিচারে ধীরগতি

আরাফাত মুন্না

পরিবেশ মামলার বিচারে ধীরগতি

পরিবেশ সূচকে ধারাবাহিক অবনতি হচ্ছে দেশের। শব্দ, পানি, বায়ুসহ সব দূষণই মাত্রা ছাড়াচ্ছে। দূষণ কমাতে আইনের মাধ্যমে ‘পরিবেশ আদালত’ নামে বিশেষ আদালত গঠন করা হলেও আইনি জটিলতায় এ আদালতে মামলা আসছে খুবই কম। যে হারে মামলা আসছে, নিষ্পত্তি হচ্ছে আরও ধীরগতিতে। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী চার নদীর দূষণ রোধে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক মামলার রায়ে পরিবেশ আদালতের মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হলেও সেই আদেশের বাস্তবায়ন নেই। সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান বলছে, পরিবেশ আইনে করা প্রায় দুই হাজার মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে। আর একমাত্র পরিবেশ আপিল আদালতে পাঁচ বছরের বেশি পুরনো মামলা রয়েছে এক হাজার ৭০০টি।

সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের দুই পরিবেশ আদালতসহ ছয় আদালতে মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা তিন হাজার ৮৪৬টি। এর মধ্যে ঢাকার পরিবেশ আদালতে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৯৭৪টি মামলা বিচারাধীন। এরপর চট্টগ্রামে ১ হাজার ৮৫৪, বরিশালে ১টি, রংপুরে ৫টি, নীলফামারীতে ১টি এবং সিলেটের পরিবেশ আদালতে ১১টি মামলা বিচারাধীন। এসব মামলার মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে ১ হাজার ৫৯৩টি মামলা, যার মধ্যে ঢাকায় ৬৯৬টি, চট্টগ্রামে ৮৯৭ এবং সিলেটে ৬টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে ঢাকায় অবস্থিত একমাত্র পরিবেশ আপিল আদালতে গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৯২৪টি পরিবেশ-সংক্রান্ত ফৌজদারি আপিল বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০টি মামলাই বিচারাধীন রয়েছে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে। এ ছাড়া ঢাকার পরিবেশ আদালতে থাকা পরিবেশ-সংক্রান্ত ৩৪৮টি মামলার মধ্যে ৩৩১টি মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন। আর চট্টগ্রামের পরিবেশ আদালতে এ-সংক্রান্ত দেওয়ানি মামলা রয়েছে ১৯৭টি। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে ৬৭টি মামলা। পরিবেশ আদালত আইন অনুযায়ী, প্রতি জেলায় একটি করে পরিবেশ আদালত স্থাপনের কথা থাকলেও বর্তমানে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে একটি করে পরিবেশ আদালত রয়েছে। এ ছাড়া বরিশালে একজন জেলা ও দায়রা জজ এবং সিলেট, রংপুর ও নীলফামারীতে একজন করে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পরিবেশ আইনের মামলা গ্রহণ করছেন। দুই বছর আগে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নতুন ২৬টি পরিবেশ আদালত গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বিচারকসহ ১২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃজনের একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে সেই প্রস্তাব এখনো ফাইল চালাচালিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিবেশ আদালত না থাকায় পরিবেশ দূষণ রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মোবাইল কোর্ট অনেক ক্ষেত্রে ভরসা হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু সেটিও পর্যাপ্ত নয়। কারণ মাঝেমধ্যে মোবাইল কোর্ট যে জরিমানা করে, সেটি আপিলে গিয়ে টেকে না। এজন্য পরিবেশ আদালতে মামলা করার বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে দোষীরা পর্যাপ্ত সাজা পাবে। পরিবেশ আইনে জটিলতার বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবেশ আদালতে জনসাধারণ সরাসরি মামলা করতে পারে না। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে অনুমোদনের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগকারীকে আবেদন করতে হয়। আইনের এসব শর্ত পূরণ করে কোনো বিচারপ্রার্থী এখানে আসতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘এজন্য আমরা আইনটি সংশোধনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছি। আশা করি সরকার ত্রুটিপূর্ণ এ আইনটি সংশোধন করে দেশের পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।’

সর্বশেষ খবর