মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ

শত কোটি টাকার এলসি নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে কয়লা আমদানি। কবে নাগাদ আমদানি শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। পরিবেশবাদী একটি সংগঠনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন খনি থেকে কয়লা উত্তোলন ও রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় সরকার। আমদানি বন্ধ থাকায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। এলসি করা কয়লা আমদানি করতে না পারলে শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বাবদ পরিশোধিত তাদের প্রায় ২০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে। এ ছাড়া এখন কয়লা মজুদ করা না গেলে আগামী শুষ্ক মৌসুমে ইটভাটাগুলোতে কয়লার সংকট দেখা দেওয়ারও আশঙ্কা করছেন তারা। চার মাস বন্ধ থাকার পর ১৭ মে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট মেঘালয় রাজ্যের খনিগুলো থেকে শুধু উত্তোলিত কয়লা ৩১ মে পর্যন্ত রপ্তানির অনুমতি দেয়। এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ মে থেকে সুনামগঞ্জের বড়ছড়া ও বাগলী সীমান্ত দিয়ে কয়লা আমদানি শুরু হয়। ৩১ মের পর ফের বন্ধ হয়ে যায় আমদানি। কয়লা আমদানিকারক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, মেঘালয় থেকে পুনরায় কয়লা রপ্তানির অনুমতি চেয়ে ভারতের ব্যবসায়ীরা আবারও উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। আগামী ২ জুলাই এই আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই দিন শুনানি শেষে আদালতের অনুমতি পাওয়া না গেলে বাংলাদেশের আমদানিকারকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন। এর আগে প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকার পর ডিসেম্বরে চালু হয়েছিল সিলেটের সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে কয়লা আমদানি। তবে শুরুর ২৫ দিনের মাথায় হঠাৎ করেই ফের আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় চার মাস বন্ধ থাকার পর এবার মাত্র ১৪ দিনের জন্য কয়লা আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। কয়লা আমদানিকারক সমিতি সিলেটের সভাপতি চন্দন সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কয়লা আমদানির জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রায় দেড়শ কোটি টাকার এলসি করা ছিল। ১৭ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকার কয়লা আমদানি হয়েছে। বাকি ১০০ কোটি টাকার এলসি এখন আটকে আছে। অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এলসি করেছেন। কিন্তু কয়লা আমদানি করতে না পেরে ঋণের সুদের বোঝা তাদের টানতে হচ্ছে। এ ছাড়া পুনরায় আমদানি শুরু না হলে এই ১০০ কোটি টাকার এলসির মধ্যে শুল্ক ও এআইটি বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যবসায়ীরা ফেরত পাবেন না। এতে তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। চন্দন সাহা বলেন, বছরের এই সময়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা কয়লা আমদানির পর মজুদ করে রাখেন। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন ইটভাটায় এসব মজুদ কয়লা বিক্রি করা হয়। কিন্তু মেঘালয় থেকে আমদানি করা না গেলে এবার কয়লা মজুদ করা যাবে না। ফলে ইট পোড়ানোর মৌসুমে কয়লার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। প্রসঙ্গত, মেঘালয়ের একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে কয়লা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারতের ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। এরপর সে দেশের রপ্তানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উত্তোলিত কয়লা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে আদালত। এর আগে ২০১৮ সালের ১ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যায় কয়লা আমদানি। পরে ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও ১৫ জানুয়ারি থেকে আদালতের অপর একটি আদেশে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।

সর্বশেষ খবর