শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

কলকাকলিতে মুখর বিএনএস বিজয়

শিমুল মাহমুদ, বৈরুত (লেবানন) থেকে

কলকাকলিতে মুখর বিএনএস বিজয়

বৃহস্পতিবারের সকালটা ছিল বৈরুত বন্দরের জন্য এক অন্যরকম উদ্দীপনাময়। ভারী অস্ত্রবাহী যুদ্ধজাহাজ বিএনএস বিজয়ের ডেক ছিল কোমলমতি একঝাঁক লেবানিজ শিশুর কলকাকলিতে মুখর। জাতিসংঘ মেরিটাইম টাস্কফোর্সের (এমটিএফ) আওতায় লেবাননে নিয়োজিত ছয়টি দেশের যুদ্ধজাহাজের একটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বানৌজা বিজয় পরিদর্শনে আসে বৈরুত শহরের অন্যতম শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘অ্যান্থনিক সোস্যাল ওরিয়েন্টেশন স্কুল।’ এই স্কুলের ৯৬ জন শিক্ষার্থী এবং ১৬ জন শিক্ষক চারটি স্কুল বাসে করে এসে জাহাজ পরিদর্শনে অংশ নেয়। এর আগে জাহাজের ডেকে আয়োজিত এক পরিচিতি সভায় মেরিটাইম টাস্কফোর্সের কার্যক্রম এবং লেবাননের সমুদ্র পথের নিরাপত্তা, চোরাচালান ও সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের কর্মকা  তুলে ধরেন লে. কমান্ডার আল আমীন কবির ও লে. কমান্ডার রাকিব উল হাসান। লে. কমান্ডার আল আমীন কবির যুদ্ধজাহাজের সেফটি ও সিকিউরিটি এবং নৌ সেনাদের কার্যক্রম সম্পর্কে স্কুল শিশুদের অবহিত করেন। লে. কমান্ডার রাকিব উল হাসান বলেন, যুদ্ধজাহাজ দেখতে এসে আজ তোমরা যেমন অনেক খুশি তেমনি তোমাদের পেয়ে আমরাও অনেক খুশি। বাংলাদেশে আমরা তোমাদের মতোই ছোট ছোট শিশুদের রেখে এসেছি। এখানে তোমাদের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে কাজ করছি।

এরপর চারটি গ্রুপের ভাগ হয়ে জাহাজের ভিতরের সামগ্রিক অপারেশনাল কার্যক্রম পরিদর্শন করে স্কুল শিক্ষার্থীরা। এর আগে শিক্ষাথীদের জন্য জাহাজের ডেকেই ফুটবল ও তীর নিক্ষেপ খেলার আয়োজন করা হয়। সমুদ্রের বুকে বিশাল যুদ্ধজাহাজের কার্যক্রম দেখে অভিভূত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষা আরবি। দোভাষীর মাধ্যমে তারা জানায়, সমুদ্রের নীল জলরাশির মধ্যে বিপুলসংখ্যক নৌ সেনার এমন দৈনন্দিন জীবনযাত্রা তাদের মুগ্ধ করেছে। যুদ্ধজাহাজ পরিদর্শন শেষে বিএনএস বিজয়ের পক্ষ থেকে শিশুদের শিক্ষা উপকরণ, উপহার এবং দুপুরের খাবার দেওয়া হয়।

এ সময় লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এবং বিএনএস বিজয়ের কমান্ডিং অফিসার এম নজরুল ইসলাম শিশুদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা আমাদের জাহাজে এসেছ এতে আমরা অনেক আনন্দিত। আমরা কেউই যুদ্ধ চাই না। এ জন্য আমরা শান্তির পক্ষে কাজ করতে এসেছি। তোমাদের সুন্দর এই দেশটা সুরক্ষিত থাকুক আমরা সেটাই চাই।

ফোর্স কমান্ডারের ভূয়সী প্রশংসা : জাতিসংঘ লেবানন মিশনের প্রধান ফোর্স কমান্ডার মেজর জেনারেল স্টেফানো ডেলকল লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশি নেভাল কন্টিনজেন্টের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। লেবাননে বর্তমানে ৪৩টি দেশের প্রায় ১০ হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছে। বৈরুত থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণে ইসরায়েল সীমান্তসংলগ্ন ফোর্স সদর দফতরে মঙ্গলবার ফোর্স কমান্ডারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নৌবাহিনীর বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল। কমোডর মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে সাক্ষাৎ শেষে ফোর্স কমান্ডার তার বক্তব্যে বলেন, আমি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই, তারা লেবাননের গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথের নিরাপত্তা ও অবৈধ তৎপরতা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে। ২০০৬ সালে মেরিন টাস্কফোর্সের শুরুতে এখানে ১৫টি শিপ ছিল।

বর্তমানে ছয়টি দেশের ছয়টি শিপ দায়িত্ব পালন করছে। তারা অবৈধ অস্ত্র পরিবহন, চোরাচালান রোধে ভূমিকা রাখছে। এর মধ্য দিয়ে মেরিটাইম টাস্কফোর্স লেবাননের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, লেবানন নেভির অল্প কয়টা শিপ রয়েছে। তা দিয়ে তারা তাদের বন্দর ও নৌপথের সুরক্ষা দিতে পারে না। জাতিসংঘের সহায়তা ছাড়া তারা তাদের সমুদ্র নিরাপদ রাখতে পারে না। এক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ফোর্স কমান্ডার বলেন, ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ এখানে জাহাজ দিয়ে ভূমিকা রাখছে। এখানে ৪৩টি দেশের শান্তিরক্ষী কাজ করছে। এর মধ্যে মেরিন টাস্কফোর্সে মাত্র ছয়টি দেশের শিপ রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ নেভি অসাধারণ ভূমিকা রাখছে। আমি আশা করছি, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে।

সর্বশেষ খবর