রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
ঢাকা বিভাগীয় সভায় নেতারা

আওয়ামী লীগ যেন আওয়ামী লীগের শত্রু

নিজস্ব প্রতিবেদক

যত বড় এমপি-মন্ত্রীই হন না কেন নিজেদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি থাকলে অন্যরা সুযোগ নেবে। মনে রাখবেন দলের অস্তিত্ব ঠিক থাকলে মন্ত্রিসভার অস্তিত্ব ঠিক থাকবে। দলের অস্তিত্ব দুর্বল হলে মন্ত্রিসভার সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে- জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এমনটাই মনে করেন। গতকাল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগের বিশেষ সাংগঠনিক সভায় জেলা নেতারা তাদের বক্তৃতায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, কিছু কিছু এলাকায় অবস্থা এমন হয়েছে, যেন আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রু। এ সময় দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়েও সমালোচনা করেন তারা। বেলা সোয়া ১১টায় শুরু হয়ে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এই বিশেষ সভা চলে। এতে ঢাকা বিভাগের ১৭টি সাংগঠনিক ইউনিটের নেতারা বক্তৃতা করেন। ঢাকা বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পরিচালনায় সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুক বলেন, ঘাটাইল ও ভুয়াপুরে কমিটি আমরা করতে পারিনি। এ সংকট থেকে আমাদের মুক্তি দিতে হবে। আমরা আপনাদের নিয়েই এ সমস্যা সমাধান করতে চাই। তিনি আরও বলেন, আমাদের আরও কিছু সমস্যা আছে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দ্বিধাবিভক্তি বা একে অপরের বিরুদ্ধে লেগে থাকার কারণে অন্যরা সুযোগ নিতে পারে। আপনি এমপিই হন বা মন্ত্রীই হন, দল দলের মতো চলবে। আমাদের দলের অস্তিত্ব ঠিক থাকলে মন্ত্রিসভার অস্তিত্ব ঠিক থাকবে। মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, দলে তো যোগ্য ব্যক্তির অভাব নেই। কিন্তু যোগ্যতার সঙ্গে আনুগত্যের সংমিশ্রণটা প্রয়োজন। লিডারশিপের প্রতি আনুগত্যে যদি একটু ঘাটতি হয়, সেখানে আমরা অনুকরণীয় কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারব না। দলের মধ্যে অনৈক্য-কলহ দূর করতে হবে। আওয়ামী লীগ যেন আওয়ামী লীগের শত্রু না হয়। আর আপন ঘরে যার শত্রু তার শত্রুতা করার জন্য বাইরের কারও প্রয়োজন নেই। মাঝে মাঝে আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করি আমাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা। তাই অনুরোধ, কলহ-কোন্দল পরিহার করে জেলা পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা আছেন, আপনারা বসে নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে, অভিজ্ঞ লিডারশিপটাকে কাজে লাগাবেন। দলের অভ্যন্তরীণ কিছু কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো দূর করুন।  রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুর হাকিম বলেন, যারা সংগঠনবিরোধী কাজ করেন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠাই। কিন্তু এগুলোর ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। আমাদের সাংগঠনিক কাঠামোতে একটা বিষয় আছেÑ জেলা-উপজেলার সুপারিশ ৯০ দিনের মধ্যে যদি কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত না দেয় তাহলে সেটা বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু আমি মনে করি এটা উল্টো হওয়া উচিতÑ ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত না দিলে তৃণমূলের সুপারিশ কার্যকর হয়ে যাবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, আমাদের ৬ থানার ১২ জনের মধ্যে ৬ জনই ভারপ্রাপ্ত। এগুলো আমরা ভারমুক্ত করতে চাই। তিনি আরও বলেন, তূণমূলের প্রশাসন এমপি-মন্ত্রীদের বেশি গুরুত্ব দেয়। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের এখানে যুব মহিলা লীগ ও কৃষক লীগ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। যারা কোনো দিনও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। রবং আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতাবিরোধী তাদের পরিবারের সদস্যদের (সহযোগী সংগঠন) স্থান দেওয়া হয়। আমরা এ বিষয়ে কেন্দ্রকে অবহিতও করেছি। কিন্তু এখনো কোনো উত্তর পাইনি। সংগঠন নিয়ে কথা বলেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে ঢোকার যোগ্যতা নেই, নিয়মে নেই; বিভিন্ন সময় তাদের দিয়ে কেন্দ্র থেকে এই কমিটিগুলো করে দেওয়া হয়। তারা কাজ করে তাদের নিজেদের মতো। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দিতে হবে। কোনো কমিটি করতে গেলে জেলা কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। সভায় মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বীরপ্রতীক, মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসানাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল বক্তব্য রাখেন। এ সময় নেতারা নিজ নিজ জেলা/মহানগর কমিটির সাংগঠনিক রিপোর্ট সংক্ষেপে উপস্থাপন করেন। বিশেষ এই সাংগঠনিক সভায় জেলা ও মহানগর নেতাদের বক্তব্যের মাঝখানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দলের মধ্যকার কলহ দূর করতে হবে। আওয়ামী লীগ যেন আওয়ামী লীগের শত্রু না হয়। কলহ-বিদ্রোহ না হয়। জেলা পর্যায়ে সিনিয়র নেতারা আছেন আপনারা বসে দলের মধ্যকার এই কলহগুলোর সমাধান করতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন নেই। ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঞ্চালনায় সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

সভায় ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দলে নেতা-কর্মীদের ডাটা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠাতে জেলা নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর আগে দলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশেষ সম্মননা জানাতে প্রতি জেলা থেকে দুজন করে প্রবীণ ও ত্যাগী নেতার নাম চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। বিশেষ সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক রিপোর্টের সঙ্গে দুজন করে নেতার নামও জমা দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর