সোমবার, ১৭ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্যাপক দাওয়াতি কার্যক্রম চলছে

-পীর চরমোনাই

ব্যাপক দাওয়াতি কার্যক্রম চলছে

জনগণকে কল্যাণধর্মী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে ব্যাপক দাওয়াতি কার্যক্রম চলছে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই বলেছেন, ‘একটি আদর্শিক পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক জনসমর্থন প্রয়োজন। ফলে এই দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এইসঙ্গে নেতা-কর্মীদের আদর্শিক মান উন্নয়নের জন্যও আত্মশুদ্ধিমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালাও চলছে।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। সভা-সমাবেশ করার অনুমতি নিয়ে চলছে নানা ধরনের টালবাহানা। সরকারি দলের সভা-সমাবেশ করতে কোনো ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয় না। কিন্তু বিরোধীদলীয় সভা-সমাবেশে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করা হয়। এ কারণেও মাঠের কর্মকা  কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এ দেশে দুই ধরনের আচরণ রাজনীতিতে একটি আশনিসংকেত। এ অবস্থা একটি স্বাধীন সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক দেশে কাম্য হতে পারে না।’ ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে জনগণের ব্যাপক স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া লক্ষ্য করেছিলাম। কিন্তু নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির কারণে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঝে রাজনীতি নিয়ে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়। জনগণ প্রচলিত দূষিত, বিষাক্ত, কলুষিত ও নোংরা রাজনীতির ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। জনগণ রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চায়। এ লক্ষ্যে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও আল্লাহর রহমতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের পর জেলা কমিটি পুনর্গঠন সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ চলমান। গ্রামভিত্তিক সংগঠনের কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও গতিশীল করার কাজও চলছে। ইউনিয়নগুলোকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে।’

 তিনি বলেন, ‘ইসলামী দলগুলোর লক্ষ্য দীন কায়েম। কল্যাণধর্মী রাজনীতি হলে ইসলামী দলের মধ্যে অনৈক্য ও বিভেদ থাকতে পারে না। ইসলামী আন্দোলন মনে করে ইসলামী দলগুলোকে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে দীন কায়েমের লক্ষ্যে কাজ করলে একসময় লক্ষ্যস্থলে পৌঁছানো সম্ভব। তা ছাড়া এক প্ল্যাটফরমে আসতে না পারার অন্যতম কারণ পার্থিব লোভ ও ক্ষমতার মোহ।’ দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রসঙ্গে পীর চরমোনাই বলেন, ‘দেশ চরম অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। সীমাহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, খুন, গুম, ঘুষ, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে জনগণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। মানুষের ভোটাধিকার ও মানবাধিকার চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। জানমালের নিরাপত্তা নেই, শিক্ষার সুষ্ঠু কোনো পরিবেশ নেই। সুস্থ রাজনীতির কোনো পরিবেশ নেই। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন দেশের সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে। ফলে বর্তমানে শেয়ারবাজারে চরম ধস নেমেছে। দেশ একদলীয় বাকশালের দিকে এগোচ্ছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে উঠছে। জনগণের মনে একধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে। দিন দিন রাজনৈতিক শিষ্টাচার মারাত্মক অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যেও একটি অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। দলের সিনিয়র নেতাদের কথায় তা ফুটে উঠেছে। কেউ বলেছেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে না পারলে প্রথম দিনেই এক লাখ লোক মারা যাবে। কেউ বলেছেন আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব থাকবে না। কেউ বলেছেন আওয়ামী লীগের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। কেউ বলেছেন নেতা-কর্মীদের পিঠের চামড়া থাকবে না। এ ধরনের আতঙ্কিত হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেয় যে কোনোভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতেই হবে। এ দেশে যে কোনোভাবেই ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়াই রাজনৈতিক শিষ্টাচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ খুবই হিংসাত্মক, ধ্বংসাত্মক ও ভয়াবহ পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।’ সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেখানে সরকারই অবৈধ সেখানে সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে বলার কী আছে? সরকার বড় বড় প্রজেক্টের নামে বড় বড় দুর্নীতি করছে। ক্ষমতা হারালেই দুর্নীতি ফুটে উঠবে। দেশের সম্পদ ক্ষমতাসীনদের হাতে কুক্ষিগত। রাস্তাঘাটের অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হলেও তার ব্যয়সীমা পাশের দেশগুলোর তুলনায় তিন-চার গুণ বেশি।’

সর্বশেষ খবর