সোমবার, ১৭ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঐক্যবদ্ধ হতে দিচ্ছে না অদৃশ্য বাধা

-মুফতি ফয়জুল্লাহ

ঐক্যবদ্ধ হতে দিচ্ছে না অদৃশ্য বাধা

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে বিদ্যমান জোটগুলোর বাইরে আলাদা একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তাতে সফল হতে পারিনি। আমরা কিন্তু আমাদের নিজস্ব চিন্তাধারা, পরিকল্পনা বা পদ্ধতি ঠিক রেখেই দেশ, জাতি ও ইসলামের বৃহত্তর কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হতে পারতাম। কিন্তু একটা অদৃশ্য বাধা আমাদের এক হতে দেয়নি বা দিচ্ছে না। এই সহজ দৃষ্টিভঙ্গি, সরল কনসেপ্ট আমরা কেন যেন বুঝতে চাই না।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় সরকারের সফলতা-ব্যর্থতাসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘ইসলামী ঐক্যজোট দেশের হক্কানি ওলামায়ে কিরাম ও ধর্মপ্রাণ জনতার শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম। সারা দেশে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদার করা হচ্ছে। জনগণের সমর্থন নিয়ে মানবতার কল্যাণ, সামাজিক ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক মদিনার আদলে একটি সমৃদ্ধ, সুশৃঙ্খল শান্তিবাদী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমাদের লক্ষ্য।’ ইসলামী দলগুলোর রাজনীতি প্রসঙ্গে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘প্রতিটি হক্কানি ইসলামী দল রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইসলামী দলগুলো এই সহজ বিষয়টা যত দ্রুত উপলব্ধি করে ঐক্যের পথে চলতে শিখবে, তত তাড়াতাড়ি ইসলাম, দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত হবে। আর নির্বাচনের পর দলগুলোর কর্মকা  নেই এটা একদমই ঠিক নয়। সবাই যার যার মতো কাজ করছে। সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।’ মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘প্রিয় স্বদেশ সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র। পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল প্রকল্প, তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগতি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা খুশির খবর।

কিন্তু ব্যাংকিং খাতে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি ইত্যাদি বিষয়ে সরকারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের উচিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করা। মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ জোরদার করা। স্বাস্থ্য খাতে অধিক মনোযোগী হওয়া। শিক্ষা নৈতিকতা সমৃদ্ধ করে এ খাতকে ঢেলে সাজিয়ে কলঙ্কমুক্ত করা। মানুষকে শহরমুখী থেকে বিরত রাখতে পরিকল্পনা করে সুনির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলকে শহর হিসেবে গড়ে তোলা। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে আরও বেশি তৎপর হওয়া। ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি জোর দেওয়া ইত্যাদি।’ মুফতি ফয়জুল্লাহ আরও বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসাকে জঙ্গিপ্রজনন কেন্দ্র বলা যেমন অন্যায় ও ভুল মনে করি, তেমন কেউ যদি এখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল বা প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোকে জঙ্গিপ্রজনন কেন্দ্র বলেন কিংবা উচ্চবিত্ত পরিবারের দীনদার ছেলেগুলোকে ঢালাওভাবে সন্ত্রাসী আখ্যা দেন তাকেও আমরা ভুল ও অন্যায় মনে করি। মসজিদ-মাদ্রাসা, ইন্টারনেট, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, প্রাইভেট ভার্সিটি, সব দীনদার মানুষকে সন্দেহের চোখে দেখা এবং এ-জাতীয় ঢালাও সমীকরণে আমরা বিশ্বাসী নই।’ তিনি বলেন, ‘সংকট ও সহিংসতার সব পন্থা রোধ, গোঁড়ামি অথবা অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর থাবা কিংবা ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের উত্তাল ঢেউ বন্ধ করতে হলে ইসলামের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ইসলামের সঠিক জ্ঞানচর্চা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে আমাদের প্রয়োজন সামনে রেখে জাতীয় চেতনা ও আদর্শের আলোকে। শিক্ষার সব ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।’

সর্বশেষ খবর