মঙ্গলবার, ১৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

নৌকার চ্যালেঞ্জ বিদ্রোহী

আজ উপজেলার শেষ ধাপের নির্বাচন

রফিকুল ইসলাম রনি

নৌকার চ্যালেঞ্জ বিদ্রোহী

উপজেলা নির্বাচনের শেষ ধাপের ১৬ ও স্থগিত আরও পাঁচ উপজেলায় ভোট আজ। এর মধ্যে চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় ১৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। শেষ ধাপেও দলীয় প্রতীকে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় নৌকার প্রার্থীর সামনে চ্যালেঞ্জ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। উপজেলা নির্বাচনে নৌকা ডোবানোর শঙ্কা আছে দলের অনেক এমপির বিরুদ্ধেও। মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে দলের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে। এখানে তার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ভাই অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান খান কালু। মাত্র ছয় মাস আগে নৌকা নিয়ে শাজাহান খান এমপি নির্বাচিত হলেও উপজেলা নির্বাচনে তিনি নৌকা ছেড়ে আনারসের পক্ষে কাজ করছেন। এ উপজেলায় দলীয় প্রার্থীর শঙ্কা নিজ দলের এমপিকে নিয়ে। প্রভাব খাটিয়ে নৌকা ডুবাতে পারেন সাবেক এই মন্ত্রী। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। রাজবাড়ীর কালুখালীতে নৌকা পেয়েছেন কাজী সাইফুল ইসলাম। তার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আলিউজ্জামান চৌধুরী। স্থানীয় এমপি জিল্লুল হাকিমের বেশিরভাগ কর্মী-সমর্থক আলিউজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আশরাফুল আলম সরকার লেবু। দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী বিদ্রোহী প্রার্থী খয়বর হোসেন সরকার মওলার পক্ষে। চ্যালেঞ্জের মুখে আশরাফুল আলম সরকার লেবু। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে দলীয় প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আরিফ বিন ইসলাম এবং ডা. জহির উদ্দিন। গাজীপুর সদরে দলের প্রার্থী সদর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন। তাকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দুলাল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খান হাবিব ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আতিকুজ্জামান মোহাম্মদ তৈয়ব আলী। নাটোরের নলডাঙ্গায় আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার আহমদ আলী শাহ। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে দলের প্রার্থী আবদুর রশিদ তালুকদার ইকবাল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে লড়ছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ খান। নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। শেরপুরের নকলায় নৌকার প্র্রার্থী শফিকুল ইসলাম জিন্নাহকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন শাহ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন। নোয়াখালী সদরে এ কে এম সামছুদ্দিন জেহানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শওকত রেজা চৌধুরী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তানভীর ভুঞার বিরুদ্ধে লড়ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী কুয়েত মহিলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নাসিমা লুৎফর রহমান মুকাই। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশাররফ হোসেন সাকু। আজ ভোটের মাঠে তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন বিদ্রোহী রিয়াজ উদ্দিন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। কিশোরগঞ্জের তানিয়া সুলতানা হ্যাপী নৌকা পেয়েছেন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়ন আলী আকবর ও ডা. মুশতাকুর রহমান। দলীয় সূত্রমতে, উপজেলা নির্বাচনে দলটির স্থানীয় এমপি ও তাদেরপন্থি নেতাদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রথম ধাপ থেকেই একক কর্তৃত্ব দেখিয়ে আসছেন তারা। মূলত ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের কারণেই প্রথম চার ধাপে নির্বাচনে ১৩৫টি উপজেলায় নৌকার প্রার্থীরা বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে বিপুল ভোটে হেরে যান। অথচ স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। শেষ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে। বিদ্রোহীদের মদদদাতা ও যারা বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর