বুধবার, ১৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

আড়াই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের

এক মাসের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কমিটি আদায়

মাহমুদ আজহার

সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ঘোষণার সময় যুবদলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিএনপিকে আশ্বস্ত করেন, এক মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দেবেন তারা। কিন্তু প্রায় আড়াই বছর হতে চলল, পাঁচ সদস্যের কমিটিতেই মেয়াদ পার করছে বিএনপির ‘প্রাণশক্তি’ বলে খ্যাত যুবদল। আরও করুণ অবস্থা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক, সাইফুল ইসলাম ফিরোজকে সিনিয়র যুগ্মসম্পাদক ও ইয়াসিন আলীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রায় তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই অভিভাবকহীন অবস্থায় ঢাকা মহানগরী বিএনপি। দক্ষিণ শাখার সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল জেলে আর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম হুলিয়া নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। হঠাৎ ঈদুল ফিতরের দুই দিন আগে ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ বর্তমান কমিটির নেতারা। ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ সময়  যে বৈঠক করেছেন হয়েছে তার উল্টো। এ নিয়ে ছাত্রদলের নেতারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিরোধ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা এবং ছাত্রদল পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্চ কমিটি। কমিটি না করার যুক্তি হিসেবে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা বলছেন, বিরোধী দলে থাকলে নানা সমস্যা পোহাতে হয়। বিশেষ করে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের এই মেয়াদের আগে ও পরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন ঘরেই থাকতে পারেননি। তা ছাড়া প্রায় দেড় বছর ধরে জেলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ কারণেই কমিটির কার্যক্রম দীর্ঘ সময় স্থবির ছিল। এরপর নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যস্ততাও কমিটির কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। যুবদলের নেতারা বলছেন, তাদের সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিন ধরেই জেলে। এমন পরিস্থিতিতেও ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৮০টির কমিটি দেওয়া হয়েছে। সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি বাকি আছে। এ দুটিও হয়ে যাবে। তবে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে ছাত্রদলের জন্যও অপেক্ষা করা হচ্ছে। ছাত্রদলের কমিটি হয়ে গেলে যারা বাদ পড়বেন তাদের একটি অংশ যুবদলে নিয়ে আসা হবে। এ প্রসঙ্গে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কমিটির জন্য প্রস্তুত। তবে বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তেই কিছুটা সময় নিচ্ছি। নানা প্রতিকূল পরিবেশেও সাংগঠনিক ৮০টি জেলার কমিটি দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের কমিটি হওয়ার পরই আমরা আশা করছি, যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারব।’ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা বলছেন, তারাও এরই মধ্যে ৮৭টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৮১টির কমিটি দিতে পেরেছেন। এর মধ্যে ৩৪টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো আহ্বায়ক ও আংশিক কমিটি। ছাত্রদলের কমিটি গঠনের পর পদবঞ্চিত নেতাদের তারা স্বেচ্ছাসেবক দলে অন্তর্ভুক্ত করবেন। এজন্যই কিছুটা সময় লাগছে। এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ম্যাডাম (বেগম খালেদা জিয়া) জেলে যাওয়ার পর আমাদের সব কার্যক্রমই বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তার পরও জেলা কমিটিগুলো প্রায় শেষের দিকে। এর মধ্যে একবার আমাদের সভাপতি জেলে যান, একবার আমি যাই। এতেও কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। এখন আমরা তাকিয়ে আছি ছাত্রদলের কমিটির দিকে। ওই কমিটি শেষে বঞ্চিত নেতাদের নিয়ে আমরা স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করব ইনশা আল্লাহ।’ তবে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বলছেন, যারা দীর্ঘ এই সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের নেতৃত্বে আর কমিটি হতে পারে না। আংশিক কমিটি ভেঙে দিতে হবে। নতুন করে কমিটি দিতে হবে। পরিস্থিতি যাই হোক, পাঁচ বা সাত সদস্যের কমিটি আড়াই-তিন বছর হতে পারে না।

ছাত্রদল নিয়ে অস্বস্তিতে বিএনপি : জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় সংসদ বাতিল করা হয়েছে। ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব দিতে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হবে। ঈদুল ফিতরের দুই দিন আগের রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ছাত্রদলের অনুষ্ঠেয় কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশে অবস্থিত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে। কেবল ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে যে কোনো বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদের কাউন্সিলের তফসিল পরে জানানো হবে বলেও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান রুহুল কবির রিজভী। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হন বিলুপ্ত কমিটির ছাত্রদল নেতারা। বয়সসীমা বেঁধে না দিয়ে ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে আন্দোলনে ছাত্রদল নেতারা। সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি তালাও ঝুলিয়ে দেন তারা। এ নিয়ে বিপাকে পড়েন বিএনপির হাইকমান্ড। কেউ কেউ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেরত আসেন।

অভিভাবকহীন ঢাকা মহানগরী বিএনপি : ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ বিএনপির ৭০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। একইভাবে এম এ কাইয়ুমকে সভাপতি ও আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে উত্তর শাখা বিএনপির ৬৬ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু দক্ষিণ শাখার সভাপতি সোহেল দীর্ঘদিন ধরেই জেলে অবস্থান করছেন।

 অন্যদিকে উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম তাবেলা হত্যা মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বাইরে রয়েছেন। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই দল পরিচালনা করছেন। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘দেশের বাইরে থাকলেও দল পরিচালনা করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’ তবে দুই শাখার সভাপতির অনুপস্থিতিতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশাবোধ কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

সর্বশেষ খবর