বুধবার, ১৯ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফলে কেমিক্যালে কঠোর ব্যবস্থা

এক মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংসের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমসহ মৌসুমি ফলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছে হাই কোর্ট। গতকাল এ সংক্রান্ত রিটের শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, বিএসটিআইর পক্ষে সরকার এম আর হাসান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

শুনানিতে আদালত বলেছেন, দেশে খাদ্যপণ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহার বাড়ছে। এটা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে এ দেশে এখন বেঁচে থাকাটাই দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার অপরাধ জেনেও ব্যবসায়ীরা তা করছেন। এতে জনসাধারণ নানা জটিল রোগে ভুগছেন। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতেই এদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে। নমনীয়তা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। এর আগে আমসহ মৌসুমি ফলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও ফরমালিনের ব্যবহার রোধে বিএসটিআইর নেওয়া পদক্ষেপ আদালতে তুলে ধরেন আইনজীবী সরকার এম আর হাসান। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আপনারা যদি সঠিকভাবে কাজ করতেন তাহলে পরিস্থিতি এ পর্যায়ে যেত না। একদিন অভিযান পরিচালনা করে আদালতে প্রতিবেদন দিলে সেটি হবে আইওয়াশ। পেপারওয়ার্ক করলে চলবে না, অভিযান দৃশ্যমান হতে হবে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে, আর সেখানে তিন কোটি টাকার জন্য আধুনিক মেশিন ক্রয় করতে বিলম্ব হচ্ছে, তা হতে পারে না। আগে জনগণকে তো বাঁচাতে হবে!’ এ পর্যায়ে বিএসটিআইর আইনজীবী বলেন, মৌসুমি ফলের ২৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করে কোনো ফরমালিন পাওয়া যায়নি। তবে যেসব অপরিপক্ব আমে কেমিক্যাল ব্যবহার করে পাকানো হয়েছে, সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। আদালত বলেন, ‘চার বছর আগে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট। আর এখন কেমিক্যালের ব্যবহার রোধে কাউন্সেলিং করছেন। এত দিন আপনারা কেন বসে ছিলেন?’

এক মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংসের নির্দেশ : সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি বন্ধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার করে ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ?নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

১০ মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়। এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সোমবার রিট করেন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন হাই কোর্টের সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

পরে আইনজীবী আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পাশাপাশি রুলও জারি করেছে হাই কোর্ট। রুলে ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি ও সংরক্ষণ বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও উপ-পরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও মহাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে আদালত স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালককে ফার্মেসিতে থাকা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি, সংরক্ষণ ও সরবরাহকারীদের শনাক্ত করতে পৃথক স্বাধীন অনুসন্ধান কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের উপ-পরিচালকের মন্তব্যের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে ওই অধিদফতরের মহাপরিচালক ও উপ-পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’

সর্বশেষ খবর