শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

সড়ক আতঙ্কের নাম মোটরসাইকেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়ক আতঙ্কের নাম মোটরসাইকেল

রাজধানীর সড়কে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে মোটরসাইকেল। বেপরোয়া গতি, লেন না মানার প্রবণতা এবং লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকের কারণে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এতে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে মোটরসাইকেল। যাত্রীকল্যাণ সমিতির দেওয়া তথ্য মতে, গেল ঈদুল ফিতরে সংঘটিত ২৩২টি সড়ক দুর্ঘটনার ৭৬টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৩০ শতাংশই মোটরসাইকেলে। আর মোট আহত ব্যক্তির ১০ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। তাদের পরিসংখ্যান বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মোটরসাইকেল। গতকাল রাজধানীর নীলক্ষেত, শাহবাগ, ফার্মগেট, গুলিস্তান, রামপুরা, গুলশান মোড়গুলো ঘুরে দেখা যায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল রাস্তায় চলাচল করছে। একটি মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি চড়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকে তা মানছেন না। চালকসহ তিনজন করে আরোহী নিতে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেকের মাথায় হেলমেট নেই। সিগন্যাল না মেনে প্রতিযোগিতা করতেও দেখা যায় অনেক চালককে। রাজধানীতে রাইডিং শেয়ার কোম্পানিগুলোর কারণে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সময় বাঁচানোর জন্য তারা প্রতিযোগিতায় নামছে। কোম্পানিগুলো খোঁজ না নিয়ে লাইসেন্সবিহীন চালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিচ্ছে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাইড শেয়ারিং চালক বলেন, ‘আগে এলাকায় রিকশা চালাতাম। খুব বেশি আয় হতো না। আমার এক বন্ধুর পরামর্শে ঢাকায় এসে অ্যাপসে মোটরসাইকেল চালানো শুরু করেছি। এখনো লাইসেন্স করতে পারিনি।’ এ ব্যাপারে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। কারণ কর্মসংস্থান হচ্ছে। কিন্তু তারা অযোগ্যদের হাতে গাড়ি তুলে দিচ্ছে। ফলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এ জন্য অনেক আগে থেকে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছি।’ রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন অনেকে। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন জাহিদুল হক। তিনি বলেন, ‘অটোতে করে যাচ্ছিলাম। মোটরসাইকেল পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে। পরে লোকজন আমাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে।’ হানিফ ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার এক রোগীর আত্মীয় বলেন, ‘রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। ডাক্তার পা কেটে ফেলার কথা বলেছেন। দুর্ঘটনার কারণে এখন তাকে পঙ্গু অবস্থায় জীবন কাটাতে হবে।’ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১৫ লাখ মোটরসাইকেলের ৫ লাখই রাজধানীতে চলাচল করে। নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের ৫৯ শতাংশ চালকেরই লাইসেন্স নেই। প্রতি বছর গড়ে দেড় লাখ নতুন মোটরসাইকেল সড়কে নামছে। ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে বাস-মিনিবাস। এর পরই মোটরসাইকেলের অবস্থান। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘মোটরসাইকেল বিপজ্জনক যানবাহন। সম্প্রতি আমাদের দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে বেশির ভাগ সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। অনেকেই আইনের তোয়াক্কা না করে হেলমেট ব্যবহার করেন না।’ এ সমস্যার প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১১১টি দাবি বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছি। এর মধ্যে অন্যতম হলো, মোটরসাইকেল বিক্রির সময় চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। রাইডিং শেয়ার কোম্পানিগুলোকে তাদের চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে বাধ্য করতে হবে।’

সর্বশেষ খবর