শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোমান ধ্বংসাবশেষ লেবানন জুড়ে

শিমুল মাহমুদ, বৈরুত (লেবানন) থেকে ফিরে

রোমান ধ্বংসাবশেষ লেবানন জুড়ে

রোমান সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, দুর্গ ও মন্দির ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লেবানন জুড়ে। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা এসব স্থাপনা দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার বিদেশি পর্যটক বিশেষ করে ইউরোপিয়ান পর্যটক ভিড় করে। লেবাননের রাজধানী বৈরুত ছাড়াও বালবেক, বিবলসসহ কয়েকটি শহরে রোমানদের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। হাজার বছরের পুরনো এসব স্থাপনাকে সযতেœ লালন করছে লেবানন। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট দেশ লেবাননের এসব ঐতিহাসিক স্থাপত্য, চোখ জুড়ানো সব সমুদ্রসৈকত, পটে আঁকা ছবির মতো সুন্দর পাহাড়-পর্বত আর অবশ্যই লেবানিজ রেস্তোরাঁর সুস্বাদু সব খাবারের বদৌলতে মধ্যপ্রাচ্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর মানুষের কাছেই দেশটি এখন একটি লোভনীয় গন্তব্য। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সভ্যতার সংস্পর্শে এসে লেবানন সমৃদ্ধ হয়েছে ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতিতে। পরবর্তী শাসকরা পূর্ববর্তীদের নিদর্শন ধ্বংস করেননি বরং সযতেœ আগলে রেখেছেন। এ জন্যই ফিনিশীয়, রোমান, আরব ও ফরাসি সভ্যতার নিদর্শন আজও দেখা যায় লেবাননের মাটিতে। সর্বশেষ ফরাসিদের অন্তর্ভুক্ত ছিল লেবানন। ১৯৪৬ সালে ফরাসিরা সম্পূর্ণভাবে লেবানন থেকে চলে গেলে স্বাধীনতার স্বাদ পায় লেবানন। তবে ফরাসির শিল্প সাহিত্যের প্রভাবও আছে লেবানিজদের মধ্যে। খবরের কাগজ খুঁজতে গিয়ে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দূরের ফ্রাসের জনপ্রিয় দৈনিক ‘লা মন্ড’ পত্রিকার স্থানীয় সংস্কারণ পাওয়া গেল লেবাননের বুক স্টলে। লেবানন ইসলাম ও খ্রিস্টবাদের বিস্ময়কর সহাবস্থানের চারণভূমি। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার আশ্চর্য মেলবন্ধনও এখানে লক্ষ্যণীয়। এটি এমনই এক দেশ, যেখানে সব রুচির মানুষ মুগ্ধ হওয়ার মতো কোনো না কোনো উপকরণ পাওয়া যাবেই। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের উত্তরে বেকা উপত্যকায় সিরিয়া সীমান্তে অবস্থিত বালবেক শহরটি পৃথিবীর বৃহত্তম রোমান ধ্বংসাবশেষ ধারণ করে আছে। দ্বিতীয় শতাব্দীরও আগে নির্মিত এখানকার মন্দিরগুলো ছিল রোমানদের পবিত্র তীর্থ। রোমান স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ এখনো সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে। বালবেকের প্রধান মন্দির জুপিটারের মন্দির। বড় বড় পাথরের টেরেস বেষ্টিত এই মন্দিরটি ২০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। অন্যদিকে রোমান এবং ক্রুসেডের সময়কার ধ্বংসাবশেষ বিবলসকে করেছে লেবাননের অন্যতম সেরা পর্যটন আকর্ষণে। ২০১৬ সালে বিবলসকে ‘আরবের পর্যটন রাজধানী’ ঘোষণা করা হয়। শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত বিবলস এলাকায় রোমান স্থাপত্য ঘিরে স্থানীয়রা ব্যবসা করছেন আমাদের মাঝার ব্যবসার মতোই। পর্যটকদের নানা সুভ্যেনির কিনতে পীড়াপীড়ি করেন তারা। উটে কিংবা ঘোড়ায় চড়তে বলেন। উঁচু পাহাড় পরিবেষ্টিত বিবলসের পাশ ঘিরে দিনরাত বয়ে চলছে বরফগলা খরস্রোতা পানির প্রবাহ। শীতে পুরো এলাকা বরফে আচ্ছাদিত থাকে। এখন সামার চলছে। পাহাড়ের চূড়ায় সামান্য বরফ জমে। বিবলসের এই ঐতিহ্যের স্থাপনা ঘিরে শত শত দোকান গড়ে উঠেছে যেগুলোতে সুভ্যেনির বিক্রি হয়। সঙ্গে আছে হুক্কা বার। পর্যটনের সঙ্গে বিনোদনের কোনো কমতি নেই এই এলাকায়।

ইতিহাস মতে, মহানবী (সা.)-এর যুগে রোমান সাম্রাজ্য সিরিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। রোমানদের তখনকার রাজার নাম ছিল হিরাক্লিয়াস, যার কাছে রসুলুল্লাহ (সা.) চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তার সঙ্গে তখনকার দিনের অপর শক্তিমান রাষ্ট্র পারস্যের রাজা খসরু ইবন হুরমুজের যুদ্ধে যখন পারসিকরা তাদের ওপর জয়লাভ করে এবং ইন্তাকিয়া ও দামেস্ক পারসিকদের হাতে ছেড়ে দিতে হয়, তখন পবিত্র কোরআনের ‘আর রুম’ এর একটি আয়াত নাজিল হয়। যার শুরুতেই বলা হয়েছে ‘রোমানরা পরাজিত হয়েছে।’ অবশ্য মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পরবর্তী কয়েক দশকের মধ্যে ইসলামের খলিফাদের কাছে পৃথিবীর দুই পরাশক্তি রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্য পরাভূত হয়।

সর্বশেষ খবর