রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাতীয় পার্টির সভায় ক্ষোভ আর প্রশ্ন

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জাতীয় পার্টির সভায় ক্ষোভ আর প্রশ্ন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে শেষ সময়ে জাতীয় পার্টির ৪২ থেকে ২২ আসনে নেমে আসা, নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের কেন্দ্র থেকে খোঁজ না নেওয়া, মনোনয়ন বাণিজ্য, পার্টিতে গ্রুপিং, অতিরিক্ত প্রমোশনসহ নানা ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিরা। গতকাল জাতীয় পার্টির বনানীর চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে চার ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে বলে একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশে প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন। তবে ৫৫ সদস্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৩৪ জন। পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ বেশ কয়েজন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য এতে অংশ নেননি। পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৈঠকে উপস্থিত সবাই মনখুলে তাদের বক্তব্য প্রদান করেছেন। আগামীতে সবার মতামতের ভিত্তিতে জাপাকে এগিয়ে নেওয়া হবে। এ ছাড়া দলের ভিতর যারা ষড়যন্ত্রকারী তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া অনেকেই দেশের বাইরে থাকায় এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকে পড়ায় বৈঠকে আসতে না পারার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন।’ জানা যায়, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির আহ্বানে এটাই প্রথম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভা। এ জন্য সকাল থেকেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত হন। সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই কাজী মামুনুর রশিদ সম্প্রতি দলের এমপি মাসুদার পদ-পদবি স্থগিতের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, একজন এমপিকে টাকার জন্য পদ স্থগিত লজ্জাজনক। বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত। জবাবে জি এম কাদের বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে সমাধান করা হবে। অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘গত জাতীয় নির্বাচনে আমাদের ৪২টি আসন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে চূড়ান্ত ছিল। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার পদ হারানোর পর আসন সংখ্যা কেন নেমে ২২টিতে এলো। এটা আমাদের জানার বিষয়।’ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দর্শন ও দল ঠিক করতে হবে। দলের ভিতর সুবিধাভোগীরা সব সময়ই ফায়দা লুটে থাকেন। তাদের বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এত বড় একটি জাতীয় নির্বাচন করলাম। কেন্দ্র থেকে কেউ খোঁজ নেয়নি।’ শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, যাকে তাকে পার্টিতে প্রমোশন দেওয়া যাবে না। দলে এসেই যেন পদ ও নমিনেশন না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, পার্টিকে শক্তিশালী করতে হলে তৃণমূলকে গুরুত্ব দিতে হবে। তৃণমূল শক্তিশালী না হলে পার্টি শক্তিশালী হবে না। পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দল গোছানোর এখনই প্রকৃত সময়। কোন আসনে কে নির্বাচন করবেন, তা এখনই নির্ধারণ করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আগামীকাল থেকে ২৭ জুন অনুষ্ঠেয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সভা সফল করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সভা শেষে জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সভাপতিম লীর সদস্য হয়েও যারা দলীয় কর্মকান্ডে  একেবারেই অনুপস্থিত থাকেন তাদের দল থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন উপস্থিত প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। যারা দলে কোন্দল তৈরি করতে চায় তাদের সদস্যপদ রাখা হবে কি না এ নিয়েও কথা হয়েছে। তিনি বলেন, নেতা-কর্মীরাই হবে সব সিদ্ধান্তের মালিক। প্রেসিডিয়ামের অনেক সদস্য দলের চাঁদা নিয়মিত দেন না বলে অভিযোগ করেছিলেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে জি এম কাদের বলেন, দলের টাকা কোনো সমস্যা নয়। অর্থের জন্য দল ঠেকে যাবে এমন কখনো হবে না। সম্প্রতি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মাসুদা এম রশিদ নয় চৌধুরী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি কন্ট্রাডিক্টরি। উই ফাইন্ড দ্য ফ্যাক্টস। ফারদার আলোচনা হয়েছে। তবে যেটা আমি জানি, সেটা বলতে পারব না।

সর্বশেষ খবর