সোমবার, ২৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

লেবানন ঘিরে বাণিজ্য সুযোগ

শিমুল মাহমুদ, বৈরুত (লেবানন) থেকে ফিরে

লেবানন ঘিরে বাণিজ্য সুযোগ

লেবাননকে ঘিরে সমুদ্রবাণিজ্য বিস্তারের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। সরকারি নীতি সহায়তা পেলে লেবানন, সিরিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাসে মেরিটাইম সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বেসরকারি জাহাজ নির্মাণ শিল্প, সরকারি পেট্রোবাংলা, বাপেক্সসহ তেল-গ্যাস অনুসন্ধান খাত। পাশাপাশি বাংলাদেশে লেবাননের বিনিয়োগ  বৃদ্ধিসহ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। এ জন্য লেবাননের বৈরুত দূতাবাসে একজন নেভাল অ্যাটাচে নিয়োগের পুরনো প্রস্তাব নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এই নেভাল অ্যাটাচে নিয়োগের মধ্য দিয়ে লেবাননকে ঘিরে পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলোর মেরিটাইম সেক্টরে বাংলাদেশের সমুদ্রবাণিজ্য বিস্তৃতির সুযোগ কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবস্থানগত বিবেচনায় লেবাননের বৈরুত দূতাবাসে নেভাল অ্যাটাচে নিয়োগ দেওয়া এখন সময়ের দাবি। লেবাননের মেরিটাইম সেক্টর মোটেও বিকশিত নয়। অন্যদিকে সিরিয়াও শান্তির পথে এগোচ্ছে। সেখানে মেরিটাইম সেক্টর বিকশিত হবে। তারা সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করবে। তাদের তুলনায় বাংলাদেশ শিপিং সেক্টর অনেক এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে তৈরি জাহাজ জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। পার্শ্ববর্তী সাইপ্রাস ও তুরস্কেও কাজ করতে পারে বাংলাদেশ। সিরিয়া ও লেবাননের যুদ্ধাবস্থা দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। তখন দেশ দুটির মেরিটাইম সেক্টরে বাংলাদেশের কাজ করার বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে। অভ্যন্তরীণ শান্তি ফিরলেই তারা সমুদ্র বাণিজ্যের দিকে মনোযোগ দেবে। লেবানন ইতিমধ্যে ভূমধ্যসাগরে তাদের অংশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে। বৈরুত দূতাবাসে বাংলাদেশের নেভাল অ্যাটাচে থাকলে বাণিজ্য বিকাশে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি লেবাননে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বার্ষিক মেডেল প্যারেড দেখতে গিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনাকালে ব্যবসা-বাণিজ্যের এ সম্ভাবনার কথা উঠে আসে। এদিকে বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাসের গত কয়েক বছরের চেষ্টায় দেশে লেবানিজ বিনিয়োগ আসতে শুরু করেছে। দূতাবাসের তৎপরতায় লেবানন-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে। দূতাবাস গত তিন বছরে লেবানিজ ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্পর্কে ১৫টি প্রেজেন্টেশন, দুুটি গোলটেবিল বৈঠক এবং একটি লাঞ্চ ডিবেটের আয়োজন করেছে। লেবাননের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রায় ৪০টি বৈঠক করা হয়েছে এবং শতাধিক ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছে। এসব তৎপরতার ফল হিসেবে লেবাননের বিবি এনার্জি এবং রেজরস ক্যাপিটালসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ শুরু করেছে। ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে লেবানিজ বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ১১ ও ৯ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলার।

 আগামী বছরগুলোতে এই বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। লেবাননের রাজর ক্যাপিটাল কোম্পানি বাংলাদেশে পর্যায়ক্রমে দুই কোটি মার্কিন ডলার (১৭০ কোটি ৭০ লাখ টাকা প্রায়) বিনিয়োগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার রাজর ক্যাপিটাল কোম্পানির অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা রামজি ফারাহর সঙ্গে একাধিক বৈঠকে এ বিনিয়োগের বিষয়ে চূড়ান্ত হয়েছে। লেবাননের বিনিয়োগকারী রামজি ফারাহ বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন। গত বছর বাংলাদেশ থেকেও একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে আলোচনার লক্ষ্যে লেবানন গিয়েছিলেন। এদিকে বাংলাদেশে এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদন কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে গত বছর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে লেবাননের বিবি এনার্জি গ্রুপ ও বাংলাদেশের রানার গ্রুপের মধ্যে বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। লেবাননের বিবি এনার্জি গ্রুপ বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকায় তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে ব্যবসা ও বিনিয়োগ করে আসছে। স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বিবি এনার্জি বাংলাদেশে এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনের লক্ষ্যে কারখানা স্থাপনে প্রাথমিকভাবে ৫ থেকে ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এ প্রসঙ্গে লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে লেবাননের একাধিক বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এক বিলিয়ন ডলারের একটি বিনিয়োগ প্রস্তাব বর্তমানে বিডা এবং পিপিপি কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন। এ সংক্রান্ত লেবাননের একটি তিন সদস্যের বিনিয়োগ প্রতিনিধি দল গত ২২-২৫ এপ্রিল বাংলাদেশে সফর করেছে। তিনি জানান, দুই দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপের মধ্যে আরও প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা চলছে। লেবাননের আরও প্রায় ২০ জন ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে। দূতাবাসের উদ্যোগে আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে বৈরুতে বাংলাদেশের একটি একক বাণিজ্যমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর