সোমবার, ২৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
সব দুধ কোম্পানির তালিকা দাখিলের নির্দেশ

জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কে দিল : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট। সংস্থাটির আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেছে, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? লাইসেন্স নেই অথচ দুধ বাজারজাত করছে- এটা দেখার দায়িত্ব কার? গতকাল এ-সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এমন প্রশ্ন করে।

এরপর বিএসটিআইর নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত কতগুলো কোম্পানির তরল দুধ রাজধানীর বাজারে আছে দুই সপ্তাহের মধ্যে তার তালিকা দিতে বলেছে হাই কোর্ট। বিএসটিআইকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়ে আগামী ১৫ জুলাই শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখেছে আদালত। দিনের শুনানির শুরুতেই আদালত বিএসটিআইর আইনজীবী সরকার এম আর হাসান ও কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের বক্তব্য শোনে। তারা বলেন, পাস্তুরিত দুধ ও দইয়ের ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে বিএসটিআই। এ ১৮টির মান ঠিক থাকছে কিনা, তা দেখভাল করার দায়িত্ব বিএসটিআইর। এর বাইরে কারা দুধ ও দইয়ের ব্যবসা করছে বা বাজারজাত করছে, তা দেখার দায়িত্ব বিএসটিআইর নয়। বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার তখন বলেন, লাইসেন্সপ্রাপ্তগুলো দেখার দায়িত্ব আপনাদের হলে লাইসেন্স ছাড়া যেগুলো আছে সেগুলোও দেখার দায়িত্ব আপনাদের। কিন্তু আপনারা বলছেন, দেখার দায়িত্ব আপনাদের নয়। আপনাদের এ বক্তব্য এফিডেভিট আকারে আদালতে দাখিল করুন। বিএসটিআইর আইনজীবী দাবি করেন, ঢাকায় অভিজাত দোকানগুলোয় (সুপার শপগুলোয়) এই ১৮টি কোম্পানির দুধ ও দই ছাড়া অনিবন্ধিত কোনো কোম্পানির দুধ বা দই বিক্রি হয় না। বিচারক তখন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) প্রধান ডা. শাহলীনা ফেরদৌসীর প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন, গুলশানের অভিজাত দোকানগুলোয় লাইসেন্সবিহীন কোম্পানির দুধ বিক্রির কথাও উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং আইনজীবীর ওই বক্তব্য সঠিক নয়। আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? লাইসেন্স নেই অথচ দুধ বাজারজাত করছে- এটা দেখার দায়িত্ব কার? জবাবে বিএসটিআইর আইনজীবী বলেন, এটা দেখার দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। দুদকের আইনজীবী মামুন মাহবুব ও রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন এ সময় বলেন, আইনে বিএসটিআইকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তারা দায়িত্ব এড়িয়ে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। বিএসটিআইর আইনজীবী তখন অনিবন্ধিত কোম্পানির দুধ ও দই ধ্বংস করার আদেশ চান আদালতের কাছে। বিচারক তখন বলেন, আপনারা স্ববিরোধী কথা বলছেন। একটু আগে বললেন, দেখার দায়িত্ব আপনাদের নয়। এখন আবার ধ্বংস করার আদেশ চাইছেন। এসব বাদ দিন। আগে আপনারা তালিকা দাখিল করুন। বাকিটা আদালত দেখবে। এরপর আদালত দুই সপ্তাহের মধ্যে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত কোম্পানির তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) প্রধান ঢাকা মেডিকেল কলেজের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শাহলীনা ফেরদৌসীকে ‘কোনোরকম বিরক্ত না করতে’ বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষসহ সরকারি সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেয় আদালত।

সর্বশেষ খবর