সোমবার, ২৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্যতিক্রমী স্বর্ণমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে মজুদ থাকা সোনা, রুপা ও হীরার  বৈধতা দেওয়ার সুযোগ দিয়ে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে তিন দিনের স্বর্ণমেলা। গতকাল সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে উদ্বোধন হওয়া এ মেলা প্রথম দিনেই সাড়া ফেলেছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের মাঝে। ভরিপ্রতি মাত্র হাজার টাকা কর দিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বৈধ-অবৈধ পথে আনা স্বর্ণের বৈধতা নিয়েছেন কর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। নিজেদের কাছে থাকা স্বর্ণালঙ্কারের সরকারি স্বীকৃতি পেয়ে বেশ খুশি ব্যবসায়ীরা। আর সুযোগ না থাকলেও আগ্রহভরে খোঁজখবর নিতে দেখা গেছে ব্যক্তিপর্যায়ে থাকা স্বর্ণের মালিকদের। ঢাকায় আগামীকাল পর্যন্ত এ মেলা চলবে। তবে চলতি মাসেই দেশের আট বিভাগীয় শহরে এই স্বর্ণমেলা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রথমবারের মতো স্বর্ণমেলার আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সার্বিক সহযোগিতায় এ মেলার আয়োজন করা হয়।  গতকাল দুপুরে মেলার উদ্বোধন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূ্ইঁয়া। এনবিআর সদস্য (আয়কর) কানন কুমার রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাজুসের সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার, সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালাসহ স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও রাজস্ব কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ানম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, তৈরি পোশাক ও চামড়া শিল্পের মতো যারা স্বর্ণালঙ্কারের কাঁচামাল রপ্তানির উদ্দেশ্যে আমদানি করবে তাদের বন্ড সুবিধা দেওয়া হবে। যারা বন্ড সুবিধা পাবেন তাদের আমদানি করা সব স্বর্ণ রপ্তানি করতে হবে। আর বন্ড সুবিধায় আনা স্বর্ণ খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না।    

মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন কর অঞ্চলের পক্ষ থেকে  মেলায় মোট ২০টি বুথ রয়েছে। এর মধ্যে কর দেওয়ার জন্য  বেসিক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের পৃথক বুথ রয়েছে। তিন দিনব্যাপী মেলায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা কর দিয়ে তাদের কাছে মজুদকৃত স্বর্ণের ঘোষণা দিচ্ছেন। তবে মেলায় কোনো স্বর্ণের ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে না।

পুরান ঢাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী আবেদ আলী খান গতকাল মেলায় এসেছিলেন তার মজুদকৃত কয়েক ভরি স্বর্ণের বৈধ স্বীকৃতি নিতে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এই সুযোগ করে দেওয়ায় আমরা বেশ লাভবান হয়েছি। পরবর্তীতে এই মেলা ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহর ছাড়াও অন্য জেলা শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত হলে সারা দেশের ব্যবসায়ীরাই উপকৃত হবেন।   

মেলার বিভিন্ন স্টলে থাকা কর কর্মকর্তারা জানান, স্বর্ণমেলায় ব্যবসায়ী বা স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুতকারীদের অঘোষিত ও মজুদকৃত স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কার, কাট ও পোলিশড ডায়মন্ড বা হীরা এবং রুপার অলঙ্কারের ঘোষণা ও এর বিপরীতে কর পরিশোধ করার সুযোগ পাচ্ছেন। স্বর্ণ বৈধ করতে প্রতি ভরি সোনা ও  সোনার অলঙ্কারে ১ হাজার টাকা, প্রতি ক্যারেট কাট ও পোলিশড ডায়মন্ডে ৬ হাজার টাকা এবং প্রতি ভরি রুপায় ৫০ টাকা কর দিতে হচ্ছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এ সুযোগের কথা জানায়। সেই প্রজ্ঞাপন অনুসারেই চলেছে স্বর্ণমেলার কার্যক্রম। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই সুযোগ ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে ব্যবসায়ীকে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে এবং রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

জানা যায়, রাজধানীসহ দেশের আট বিভাগে এবার আয়োজিত হচ্ছে স্বর্ণমেলা। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২৩ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত এবং রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশালে আজ ২৪ জুন চলবে এই মেলা। ঢাকার বাইরে স্বর্ণমেলা উদ্বোধন ও দেখভালের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর-শুল্ক বিভাগের সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর সোনা নীতিমালা অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে ব্যাগেজ রুলের আওতায় শুল্ক দিয়ে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা অনুষ্ঠানে বলেন, স্বর্ণমেলার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিনের অপবাদ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন। সারা দেশের সব স্বর্ণ ব্যবসায়ী এই সুযোগের আওতায় তাদের সম্পদের স্বীকৃতি গ্রহণ করবেন বলে তিনি আশা করছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর