মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিদেশী চক্র ৬ এলাকার ৯ বুথের টাকা নেয় যেভাবে

খরচের জন্য বাংলাদেশি মুদ্রা নিয়েই বিমানবন্দর হয়ে প্রবেশ, আছে এদেশীয় এজেন্ট

সাখাওয়াত কাওসার

বাংলাদেশি মুদ্রা নিয়েই এটিএম জালিয়াতকারীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ি ভাড়া করে পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেন ইন্টারন্যাশনাল, গুলিস্তানের হোটেল শালিমার এবং উত্তরার হোটেল এরোলিংক ইন্টারন্যাশনালে উঠে নিয়ম অনুসারে বুকিং হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রা দিয়েছিলেন। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল পর্যন্ত আসা গাড়িচালককে দেশি মুদ্রাতেই ভাড়া পরিশোধ করেছিলেন। ইতিমধ্যে গাড়িচালক এবং হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পর তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই চক্রের সঙ্গে অবশ্যই দেশীয় লোকজন জড়িত। তবে এটিএম জালিয়াতিতে গ্রেফতার ছয়জন এবং পলাতক একজন ইউক্রেনের নাগরিক ছাড়া আরও তিনজন ইউক্রেনিয়ান এবং একজন রাশিয়ানের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তারা। এরা পর্যায়ক্রমে ২ জুন এবং ৪ জুন বাংলাদেশ ত্যাগ করে। তবে পলাতক এক ইউক্রেনিয়ান এখনো দেশে অবস্থান করছেন নাকি দেশ ত্যাগ করেছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। তবে গতকাল ইউক্রেনের ফার্স্ট সেক্রেটারি ওলেকসানড্রে গ্রোমোভ তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে দেখা করেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

রাজধানীর ৯টি এটিএম বুথ থেকে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সাড়ে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রের সদস্যরা। গুলিস্তানের শালিমার হোটেলে অবস্থানকারী রাশিয়ার ভøাদিস্লাভ সের্গিয়েভিচ (৩৪) এর সঙ্গে থাকা তিন ইউক্রেনিয়ান সেরহি বারবাশ, রোমন রাডঝিভেস্কি, ডিমট্রো রেসচেনকো রাজধানীর নিকুঞ্জ, রেডিসন ও রামপুরার ডিআইটি রোডের চারটি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলেছিলেন বলে এরই মধ্যে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, রাশিয়ার নাগরিক ভøাদিমির ৩১ মে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি গুলিস্তানের হোটেল শালিমারে ওঠেন। ৪ জুন রাত নয়টা দশ মিনিটে হোটেল ছেড়ে দেন। ওইদিনই রাত একটা ৫৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশ ছাড়েন। বাকি তিন ইউক্রেনের নাগরিক উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর, ১৫ নম্বর রোডের এরোলিংক ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে ওঠেন। এরা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে করে বাংলাদেশ ছাড়েন ২ জুন। হোটেল শালিমার সূত্রে জানা গেছে, ২ জুন সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে দুজন ইউক্রেনিয়ান নাগরিক হোটেলে গিয়ে ভøাদিস্লাভের সঙ্গে দেখা করেন। এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জন ইউক্রেন ও ১ জন রাশিয়ানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। গত ১ জুন সন্ধ্যায় খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় ডাচ্-বাংলার এটিএম বুথে ইউক্রেনের দুই নাগরিক টাকা চুরি করতে গিয়ে একজন ধরা পড়লেও পালিয়ে যান আরেকজন। ওই দিন রাতেই রাজধানীর পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেন থেকে ইউক্রেনের আরও ছয় নাগরিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই চক্রের ভিটালি (পাসপোর্ট নম্বর এফই ৮০৪৪৪৮) নামের একজন এখনো পলাতক। জানা যায়, ৩০ মে বিকালে তুর্কি এয়ারওয়েজের একটি বিমানে করে ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশে আসেন সাত নাগরিক। পরদিনই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মধ্য বাড্ডার দুটি বুথ থেকে ৪ লাখ টাকা চুরি করেন। আর ১ জুন র‌্যাডিসন হোটেল, কাকরাইল, রামপুরার ডিআইটি সড়ক ও নিকুঞ্জ এলাকার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে চুরি হয়। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৬ লাখ টাকা চুরির খবর পাওয়া গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথেও হয়তো বড় অঙ্কের টাকা চুরি হয়েছে। তবে একমাত্র ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। যেসব বুথ থেকে টাকা চুরি হয়েছে তার আশপাশের এলাকায় যেসব ব্যাংক রয়েছে এমন পাঁচটি ব্যাংক-ইউসিবি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, প্রিমিয়ার, সিটি ও ব্র্যাক ব্যাংকের কাছে ৩১ মে ও ১ জুনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তারা চেয়েছেন। এর মধ্যে কেবল সিটি ব্যাংক চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছে। বাকি ব্যাংকগুলো এখনো সাড়া দেয়নি। অন্যদিকে, আজ তৃতীয় দফায় গ্রেফতার ৬ ইউক্রেনিয়ানকে ৪ দিনের রিমান্ডে আনছেন তদন্ত কর্মকর্তা। জানা গেছে, গতকাল দুপুরে ইউক্রেনের ফার্স্ট সেক্রেটারি ওলেকসানড্রে গ্রোমোভ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। এর আগে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে দেখা করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের তিনি তথ্য দিয়ে সার্বিক সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেছেন, তার সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আমাদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর