মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

নয়াপল্টনে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধদের বিক্ষোভ, ককটেল বিস্ফোরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নয়াপল্টনে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধদের বিক্ষোভ, ককটেল বিস্ফোরণ

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মারামারি (ইনসেটে ককটেল) -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বেশ কয়েকজন নেতাকে বিএনপির পক্ষ থেকে বহিষ্কার করার পর ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা গতকালও রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছেন। সকালের পর থেকেই তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এ সময় ছোট ছোট মিছিল নিয়েও সেখানে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের আসতে দেখা যায়। বেলা সোয়া ১টার দিকে তারা সেখান থেকে একটি মিছিল বের করেন। এর পরপরই গোল্ডেন প্লেট রেস্টুরেন্টের গলি ও মূল রাস্তায় পর পর দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আরও চারটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। একটি অবিস্ফোরিত থেকে যায়। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আশপাশের লোকজন দিগি¦দিক ছোটাছুটি শুরু করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। তবে কারা এসব ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, সেটি জানা না গেলেও ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ অংশের আন্দোলনের মধ্যেই নয়াপল্টনে মুহুর্মুহু এই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশ এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা ছাত্রদলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা তুলে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বহিষ্কারাদেশ ও নতুন কমিটি গঠনের জন্য কাউন্সিল অধিবেশনের তফসিল বাতিলেরও দাবি জানান। ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ এই নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন।

৩ জুন রাতে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে দিয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের কথা বলে বিএনপি। এতে কাউন্সিলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে ২০০০ সালের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতার শর্ত আরোপ করা হয়। এরই প্রতিবাদে ১০ জুন ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধরা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে তারা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে অবস্থান কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে শনিবার রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ‘দলীয় শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের’ ১২ জন নেতাকে ‘দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে’ বলে ঘোষণা করা হয়। এরা হলেন- ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহিরউদ্দিন তুহিন, ছাত্রদলের ভেঙে দেওয়া কমিটির সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, ইকতিয়ার কবির, জয়দেব জয়, মামুন বিল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বায়েজিদ আরেফিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক দবির উদ্দিন তুষার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত, আবদুল মালেক ও সদস্য আজিম পাটোয়ারী। এর মধ্যেই আবার রবিবার বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আগামী ১৫ জুলাই ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। সরাসরি ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। এ কাউন্সিল উপলক্ষে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে প্রধান করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল ছাত্রদলের এ কাউন্সিলের ভোটার তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। আগামী ১৫ জুলাই ছাত্রদলের কাউন্সিল বাতিল করে পুনঃতফসিল ঘোষণার দাবি জানান ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা। এ সময় তারা বহিষ্কারাদেশ বাতিলের পাশাপাশি নতুন কমিটি গঠনের জন্য কাউন্সিল অধিবেশনের তফসিল বাতিলের দাবিও জানান। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে বিক্ষোভ করেন। এ সময় কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে কার্যালয়ের ভিতরে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহানগর বিএনপির কয়েকশ নেতা-কর্মী অবস্থান করেন। কার্যালয়ের আশপাশেও ছাত্রদল এবং বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। আন্দোলনকারীরা কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু করলে তা প্রতিহতেরও ঘোষণা দেন তারা। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ভিতরে অবস্থানরত ও বাইরের আন্দোলনকারী ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের মধ্যে টানাহেঁচড়ার ঘটনাও ঘটে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেউ প্রবেশ করতে গেলে কিংবা সেখান থেকে বের হতে গেলে তাকেই পেটাতে থাকেন বিক্ষুব্ধ নেতারা।

বেলা পৌনে ১২টার দিকে তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে নয়াপল্টনে অবস্থান নেন। সে সময় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ছাত্রদলের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ইউনিটের এক নেতা কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে তাকে ধরে মারধর করা হয়। অন্যদিকে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীরা গতকাল সকালে মিছিল করেন। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের (দক্ষিণ) সভাপতি এস এম জিলানী সংগঠনের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে তারা ঢুকতে পারেননি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভিতরে তখন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের জুয়েলসহ শতাধিক নেতা-কর্মী অবস্থান করছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর