শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
তিউনিসিয়ায় কঠিন জীবন

নির্মমতার বর্ণনা মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরা যুবকদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৬ যুবক আটকা পড়েছে তিউনিসিয়ায়। সেখানে তারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। খেয়ে না খেয়ে কাটছে দিন। আটকেপড়াদের কষ্টের করুণ কাহিনী শোনালেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে সদ্য ফেরা যুবক ইদ্রিস জমাদ্দার। তিনি জানান, এমনো সময় গেছে যখন তার সঙ্গীরা প্রসাব খেয়ে পিপাসা মিটিয়েছে। একটি আপেল কেটে পাঁচজনকে দেওয়া হয়েছে। সারা দিনে এটাই ছিল তাদের খাবার। শুধু তাই নয়, বদ্ধ প্রকোষ্ঠে আটকিয়ে রাখা হয়। প্রয়োজনে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয় দালাল চক্র। ইদ্রিস জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছতুরা শরীফ গ্রামের ১৬ জন এখনো তিউনেশিয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। লেবাননে অবস্থানকারী চার সদস্যের দালালচক্র তাদের সর্বস্বান্ত করেছে। ধারদেনা করে দালালকে টাকা দিয়েছেন। জনপ্রতি ১০ থেকে ১৯ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে তারা।

জানা যায়, কিছুতেই থামছে না দালালের দৌরাত্ম্য। একের পর এক ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব হারিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে অনেককে। কেউ ফেরার অপেক্ষায় আছে। কেউ এখনো নিখোঁজ। সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চার যুবক ইতালি সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ফেরত এসেছেন। চরম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, দালালচক্র কৌশলে যুবকদের প্রলুব্ধ করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছে। গত ৬ মাসে কয়েক যুবক প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসে। পুলিশ বলছে, এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিপুল সংখ্যক তরুণ ও যুবক মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের জন্য যাচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে দালাল চক্র। তাদের প্রতারণার শিকার যুবকদের একজন আখাউড়া উপজেলার ইউনুস জমাদ্দারের ছেলে ইদ্রিস। প্রায় এক বছর আগে তুলাতলা গ্রামের দালাল হুসেনের মাধ্যমে লিবিয়া যান তিনি। ত্রিপোলির জামিয়া আরিফিয়া নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনারের চাকরি নেন। পরে হুসেনের মাধ্যমেই খোঁজ পান লিবিয়ায় অবস্থানকারী আখাউড়ার ষোলঘর গ্রামের দালাল সেলিমের। ইদ্রিস, আবু বক্কর, সাহেজুল, নিয়ামতসহ আরও ১৬ জনকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখায় সেলিম। প্রথমে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় যাওয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা করে নেওয়ার পর লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য আরও তিন লাখ টাকা করে নেয়। পরে সেলিমের আসল চেহারা ফুটে ওঠে। প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলে তাদের ওপর। দিনে এক বেলা করে খাবার দেওয়া হতো। বাড়িতে ফোন করতে চাইলে সময় নির্ধারিত থাকত ১/২ মিনিট। একপর্যায়ে কাঠের নৌকায় করে ইতালির উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। ৩৩ জন ধারণ ক্ষমতার নৌকায় উঠানো হয় ৭৫ জনকে। ৩ দিন সাগরে ভেসে থাকার পর নৌকা ইতালির শূন্যরেখায় পৌঁছলেও ইতালি যেতে পারেনি তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর