মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা

বান্ধবীকে নিয়ে ফেরা হলো না ফাহমিদার

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বান্ধবীকে নিয়ে ফেরা হলো না ফাহমিদার

ফাহমিদার অনেক দিনের শখ ছিল বাগেরহাট যাওয়ার। সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ আর খানজাহানের সমাধির কথা অনেক শুনেছে সে। কিন্তু চোখে দেখা হয়নি। এনিয়ে বাগেরহাটের বাসিন্দা সহপাঠী সানজিদাকে প্রায়ই বেড়াতে যাওয়ার কথা বলতো ফাহমিদা। বান্ধবীর আগ্রহ দেখে ঈদের পর বাগেরহাট বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সানজিদা। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিবার রাতে সিলেট থেকে উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে রওয়ানা হয়েছিল দুই বান্ধবী। সিলেট থেকে ঢাকা, এরপর ঢাকা থেকে বাগেরহাট যাওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়ই শেষ হয়ে যায় তাদের সব স্বপ্ন। ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমায় দুই বান্ধবী। নিহত সানজিদা আক্তার ও ফাহমিদা ইয়াসমিন ইভা দুজনই সিলেট নার্সিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ২০১৭ সালে তারা ভর্তি হয়েছিলেন সিলেট নার্সিং কলেজে। আর এক বছর পড়ালেখার পর তারা ছয়মাসের ইন্টার্নি করে নার্স পেশায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করার কথা ঠিক করেছিলেন। কিন্তু মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা তাদের সেই স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। সানজিদা বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট থানার ভানদরখোলা গ্রামের মো. আকরাম মোল্লার মেয়ে এবং ফাহমিদা ইয়াসমিন ইভা সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুরের আবদুল্লাহপুর গ্রামের আবদুল বারীর মেয়ে। বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক জানান, সানজিদার সঙ্গে বাগেরহাট বেড়াতে যাচ্ছিল ফাহমিদা। নার্সিং কলেজের এ দুই ছাত্রী পড়ালেখায়ও বেশ মেধাবী ছিল। ট্রেন দুর্ঘটনায় তারা নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর সিলেট নার্সিং কলেজ, নার্সিং অ্যাসোসিয়েশন ও ফাহমিদার পরিবারের সদস্যরা কুলাউড়ায় ছুটে যান। ফাহমিদার পরিবারের সদস্যরা তার লাশ গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ সুরমার জালালপুরে নিয়ে যান। অন্যদিকে সানজিদার লাশ বিকাল ৩টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর লাশ নেওয়া হয় তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সিলেট নার্সিং কলেজে। সেখানে তার লাশ দেখে সহপাঠী ও শিক্ষকরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে সেখানে জানাজা শেষে সানজিদার লাশ ওসমানী হাসপাতালের মরচ্যুয়ারিতে রাখা হয়। ফেরা হলো না মনোয়ারার : ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত তিন নারীর মধ্যে অপরজন হচ্ছেন কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর গ্রামের আবদুল বারীর স্ত্রী মনোয়ারা পারভিন (৪৫)। শনিবার তিনি সিলেট নগরীতে তার বড় মেয়ে মুন্নীর বাসায় বেড়াতে আসেন। এসময় তার ছোট মেয়ে রোকশানা সঙ্গে ছিল। পরদিন রবিবার বিকালে পারাবত এক্সপ্রেসে ছোট মেয়েকে নিয়ে তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু স্টেশনে পৌঁছার আগেই ছেড়ে যায় পারাবত এক্সপ্রেস। উপায়ন্তর না পেয়ে রবিবার রাতে উপবনে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। কুলাউড়ার বরমচাল এলাকায় আসার পর ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে। এসময় ট্রেনের নিচে চাপা পড়েন তিনি। ছোট মেয়ে রোকশানা অনেক চেষ্টা করেও তাকে বের করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত মেয়ের বাসা থেকে স্বামীর বাড়িতে তার আর ফেরা হয়নি। পাড়ি জমাতে হয় পরপারে। ওসমানীতে আহত ২৪ যাত্রী : কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতরা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন ২৪ জন। এর মধ্যে তিনজন সকালে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। বাকি ২১ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের সবার অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইউনুছুর রহমান। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিশেষ টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি। নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের শোক : সিলেট নার্সিং কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন নার্সিং অ্যাসোসিয়েশন ওসমানী হাসপাতাল শাখার সভাপতি শামীমা নাসরিন ও সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক।

প্রসঙ্গত, রবিবার রাতে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত ১১টা ৪৮ মিনিটের সময় কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল স্টেশনের পাশে বড়ছড়া ব্রিজের ওপর মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ে। ট্রেনের দুটি বগি ব্রিজের নিচে খালে পড়ে যায়। এতে সানজিদা ও ফাহমিদাসহ তিন নারী ও এক পুরুষ যাত্রী নিহত হন। আহত হন কয়েকশ যাত্রী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর