বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডিআইজি মিজান বরখাস্ত

চারজনের বিরুদ্ধে মামলা, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব ও আদালত প্রতিবেদক

বহুল আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর তার সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জারি করেছে বলে গত রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে কী কারণ দেখিয়ে ডিআইজি মিজানকে বরখাস্ত করা হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। পুলিশের এই উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নানা ঘটনায় আলোচনার মধ্যে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুদক মামলাও করেছে। তার বিদেশ পালানো ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারিও বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে।

এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় গত বছর জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মিজানকে। এর চার মাস পর তার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক। সে দায়িত্ব যিনি পালন করছিলেন, সম্প্রতি দুদকের সেই পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন ডিআইজি মিজান। ৮ জুন তিনি দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা বাছির। এর সপক্ষে তাদের কথোপকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ একটি টেলিভিশনকে দেন তিনি। ওই অডিও প্রচার হওয়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্র গত রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, ডিআইজি মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের প্রস্তাব পুলিশ সদর দফতর থেকে মন্ত্রণালয়ে আসার পর সেটি যথাযথ নিয়মে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। গতকাল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পর মিজানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সরকারি যে কোনো কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন আবশ্যক। কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ হয় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে। এদিকে ডিআইজি মিজানুর রহমানসহ চারজনের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ২৪ জুলাই দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। এদিকে ডিআইজি মিজানসহ মামলার অন্য তিন আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করার পর এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় বলে সংস্থাটির জনসংযোগ কার্যালয় জানিয়েছে। এর আগে সোমবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ দুদকের পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানসহ চারজনের সাড়ে ৪ কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে সোয়া ৩ কোটি টাকার সম্পদই অবৈধ। মামলায় ডিআইজি মিজান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রতœা (৫০), ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান (৫০) ও ভাগ্নে পুলিশের কোতোয়ালি থানার এসআই মাহমুদুল হাসান (২৯)। দুদকের সংশোধিত বিধিতে নিজস্ব দফতরে করা এটাই প্রথম মামলা। এর আগে সব মামলা থানায় করত দুদক। দুদক আইন, ২০০৪ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ দ-বিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করেছে দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মিজানের নামে ও বেনামে অর্জিত ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪৩ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন, যার মধ্যে ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার ৪২১ টাকার হিসাব গোপন করেছেন। এর আগে সম্পদবিবরণী দাখিলের নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট তিনি সম্পদবিবরণী দাখিল করেন।

সর্বশেষ খবর