বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাসিরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ঘুষগ্রহণের সত্যতা পেয়েছে দুদক, আপত্তিকর চিঠিতে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ, কর্মকর্তাকে শোকজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাসিরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমান ও তার পরিবারের তিন সদস্যের পর এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাসিরের (সাময়িক বরখাস্ত) বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত ওই চিঠির অনুলিপি ইমিগ্রেশনেও পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, এনামুল বাসিরের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানে ঘুষ লেনদেন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এদিকে সাংবাদিককে আপত্তিকর ভাষায় চিঠি প্রদান করায় দায়িত্বে অবহেলা ও অসদাচরণের অভিযোগে দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যাকে শোকজ করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে দুদকের নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর আগে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকরা মানববন্ধন করেন। সেখানে সাংবাদিকরা দুদকের নোটিসে আপত্তিকর ভাষা প্রয়োগের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান। এনামুল বাছিরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত দুদকের চিঠিতে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানে ঘুষ লেনদেন ও মানি লন্ডারিং-সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বক্তব্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি সপরিবারে দেশত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তার বিদেশ গমন ঠেকানো প্রয়োজন। এর আগে তিনি বিদেশে গিয়ে থাকলে সে বিষয়েও তথ্য চাওয়া হয়েছে দুদকের চিঠিতে। এদিকে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সঠিক ভাষা প্রয়োগে দুই সাংবাদিককে চিঠি না দেওয়ার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা, অদক্ষতা ও অসদাচরণের অভিযোগে দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যাকে শোকজ করেছে সংস্থাটি। দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. জহির রায়হান স্বাক্ষরিত নোটিসে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকরা মানববন্ধনে দুদকের নোটিসে আপত্তিকর ভাষা প্রয়োগের তীব্র প্রতিবাদ জানান। দুই সাংবাদিককে দেওয়া দুদকের চিঠি প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাংবাদিকরা। সকালে দুদক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আপত্তিকর ভাষায় দেওয়া চিঠির জন্য দুঃখ প্রকাশ, চিঠি প্রত্যাহার, যিনি চিঠি ইস্যু করেছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করা। পরে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, দুই সাংবাদিককে যে কর্মকর্তা চিঠি দিয়েছেন, তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে কমিশন। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, দুদকের এক কর্মকর্তাকে পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের ঘুষ প্রদান-সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান করছেন দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা। সেই অনুসন্ধানের প্রয়োজনে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি দিপু সারোয়ার ও এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ইমরান হোসেন সুমনকে পৃথক চিঠিতে সাক্ষ্য দিতে অনুরোধ করেন তিনি। দিপু সারোয়ারকে পাঠানো চিঠিতে সাক্ষ্য দিতে হাজির না হলে ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে’ মর্মে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে আপত্তিকর ভাষা প্রয়োগের ঘটনায় সাংবাদিকরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। ফানাফিল্যাকে দেওয়া দুদকের শোকজ নোটিসে বলা হয়, দিপু সারোয়ারকে পাঠানো চিঠিতে ‘অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে’ উল্লেখ করা হলেও ইমরান হোসেন সুমনের চিঠিতে তা উল্লেখ করা হয়নি, যা অনুসন্ধান-সংক্রান্ত প্রচলিত ফরম্যাটের পরিপন্থী। একই বিষয়ে দুজনের একজনকে প্রচলিত ফরম্যাট অনুযায়ী এবং অন্যজনকে প্রচলিত ফরম্যাট-বহির্ভূতভাবে চিঠি দেওয়ায় আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, যা অসদাচরণের শামিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর