বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন

বাঁচানো গেল না সেই কলেজছাত্রী ফুলনকে

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নরসিংদী প্রতিনিধি

বাঁচানো গেল না সেই কলেজছাত্রী ফুলনকে

ফুলনের (ইনসেটে) স্বজনদের আহাজারি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির পর এবার খুনিদের নৃশংসতার নির্মম বলি হয়ে জীবন দিতে হলো নরসিংদীর কলেজছাত্রী ফুলনকে। গতকাল ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যু হয় তার। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। ঢামেকে মেয়ের মৃত্যুর খবরে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা অঞ্জলি রানী বর্মণ। ফুলন তখন সব হিসাব চুকিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পরপাড়ে। মাঝে সয়েছেন দীর্ঘ ১৩ দিনের কঠিন মৃত্যু যন্ত্রণা। নিহত ফুলন মৃত্যুর আগে জড়িতদের নাম বলেছে বলে দাবি করেছেন তার মা। ফুলনের মা বলেন, যারা আমাদের আগে হুমকি দিত, আমাদের বাড়িঘর পুড়বে, পুলিশে দেবে, আমাদের জেলে দেবে আমার মেয়ে তাদের কথা বলে গেছে। জানা যায়, ফুলন রানী বর্মণ নরসিংদী পৌর এলাকার বীরপুর মহল্লার যোগেন্দ্র চন্দ্র বর্মণের মেয়ে। তিনি গত বছর নরসিংদী শহরের উদয়ন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। আর্থিক দুরবস্থার কারণে পরে ফুলন কোথাও ভর্তি হতে পারেননি। ফুলনের বাবা যোগেন্দ্র বর্মণ দলিল লেখকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। গত ১৩ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে নরসিংদী পৌর শহরের বীরপুর এলাকায় দোকান থেকে কেক কিনে বাসায় ফিরছিলেন কলেজছাত্রী ফুলন বর্মণ। এ সময় তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তিন দুর্বৃত্ত। তাৎক্ষণিক তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে যায়। আর পুড়ে যাওয়া স্থানে ক্ষত ছিল অনেক গভীর।

এতে ইনফেকশন হয়ে যাওয়ায় তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ঘটনার পরই পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ৬ জনকে আটক করে। এদের মধ্যে আটক রাজু সূত্রধর আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই এলাকার ফণিন্দ্র বর্মণের ছেলে আনন্দ বর্মণ (২১) ও কিশোরগঞ্জের ডাংরি এলাকার নারায়ণ বর্মণের ছেলে ফুলনের ফুফাতো ভাই ভবতোষ বর্মণকে গ্রেফতার করে।

ওই জবানবন্দি থেকে জানা যায়, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ফুলন বর্মণকে গায়ে আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টা করেন তার ফুফাতো ভাই ভবতোষ বর্মণ। তবে ফুলনের ভাই সুমন বর্মণ বলেন, আমরা যাদের সন্দেহ করছি পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি। বরং তারা আমাদের ভাইকে গ্রেফতার করেছে। ভবতোষ ভয় পেয়ে দোষ স্বীকার করেছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। দোষী যেই হোক অবিলম্বে প্রকৃত অপরাধীর বিচার চাই। ফুলনের বাবা যোগেন্দ্র বর্মণ বলেন, আমার মেয়েকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমি বুঝতে পারিনি দুধকলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছি। ভবতোষ যে এ ঘটনা ঘটাবে আমরা চিন্তাও করতে পারিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক আবদুল গাফফার বলেন, ‘বর্তমানে অগ্নিদগ্ধের বিষয়টি খুবই আলোচিত ও সেনসেটিভ। তাই অপরাধীরা প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে এ পথ বেছে নেয়। এতে প্রতিবেশীও দমন হবে, সম্পত্তির ওয়ারিশও হবে ভবতোষ। সেই লোভ থেকেই তারা এ কাজ করেছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।’

সর্বশেষ খবর