শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বদলে যাচ্ছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

বদলে যাচ্ছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন

বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ) সুন্দরবনের সুরক্ষায় সরকার এবার ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয় করতে যাচ্ছে। এতেকরে বদলে যাবে সুন্দরবন। এ পদক্ষেপ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে আরও বেশি সুরক্ষিত করবে। বনটি রূপান্তরিত হবে ইউনেস্কো প্রত্যাশিত ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে।

এ বিষয়ে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, সুন্দরবন সুরক্ষা নামে পাঁচ বছর মেয়াদি  প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য সংরক্ষিত এই ম্যানগ্রোভ বনের বন্যপ্রাণী-গাছপালাসহ প্রাণপ্রকৃতি ও বনের পরিবেশ-প্রতিবেশের কৌশলগত পরিবর্তন নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করা হয়েছে। এ প্রকল্পে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল সাড়ে ৩ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উন্নয়ন-আধুনিকায়নসহ প্রতিবেশ পর্যটন (ইকো ট্যুরিজম), সার্বক্ষণিক বন পাহারায় অত্যাধুনিক জলযান সংগ্রহ, ঝুঁকির মধ্যে থাকা ২৮টি বন অফিস আধুনিকায়ন ও ব্যবস্থানা পরিকল্পনায় আধুনিকায়ন কর্মসূচি রয়েছে। চলতি বছর থেকেই ৪৫৯ কোটি ৯৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

বন বিভাগ বলছে, কয়েক বছর ধরে সুন্দরবন জুড়ে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ‘স্মার্ট প্রোট্রোলিং’-এর মাধ্যমে বন পাহারা দেওয়ায় এ বছর সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ১০৬টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪টিতে। এইসঙ্গে খালে বিষ দেওয়া রোধ, গত ১১ মার্চ থেকে সুন্দরবন অভ্যন্তরে ২৫ ফুট বা তার চেয়ে ছোট খালগুলোতে সারা বছর মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ও ২৫ ফুটের উপরের সব খালগুলোতে মাছের প্রজনন মৌসুম জুলাই ও আগস্ট মাসে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন অফিস বাড়ানোর পাশাপাশি মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য ১৮টি বড় খাল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিনের জন্য তিনটি নদীর ১০.৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তিনটি অভয়ারণ্যও গড়ে তোলা হয়েছে। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে সুন্দরবন এলাকায় আর কোনো শিল্প-কারখানা স্থাপনের অনুমতিও দিচ্ছে না সরকার। সূত্র জানায়, সুন্দরবন সুরক্ষায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে কাজ করছে। সুন্দরবনে মিষ্টি পানির প্রবাহ বাড়াতে গড়াই নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সুন্দরবন বিভাগ আরও বলছে, একের পর এক বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ম্যানগ্রোভ এই বনের প্রাণপ্রকৃতি এখন আগের থেকে অনেক অনেক বেশি সুরক্ষিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, জীববৈচিত্র্যের আধার সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে স্থল বা বন ভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪২.২ বর্গ কিলোমিটার ও জল ভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪.১ বর্গ কিলোমিটার। ম্যানগ্রোভ এই বনে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও দুই প্রজাতির হরিণসহ মোট ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ৩১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। সুন্দরবন জুড়ে ৪৫০টি নদ-নদী ও খালে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, বিশাবখ্যাত শিলা কাঁকড়াসহ ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও ১ প্রজাতির লবস্টার রয়েছে। আরও রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর