সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

অনুমোদন না নিয়েই সেই ভবন ব্যবহার

চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনে পোড়া ওয়াহিদ ম্যানশনে আবার দোকানপাট

মাহবুব মমতাজী

অনুমোদন না নিয়েই সেই ভবন ব্যবহার

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহিদ ম্যানশন ভবনের নিচতলায় বসেছে দোকান। পোড়া ভবনেই নতুন ইট বসিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে। গতকাল তোলা ছবি -রোহেত রাজীব

কোনো অনুমোদন না নিয়ে ভবন ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহিদ ম্যানশনের মালিক। এমনকি বুয়েটের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী ভবন পরীক্ষা না করে ও রাজউকের অনুমোদন না নিয়েই লাগানো হয়েছে নতুন ইট, সিমেন্ট, বালি। যা আরও বেশি ঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। রাজউক বলছে, বিস্তারিত পরীক্ষা রিপোর্ট ছাড়া অনুমোদন না নিয়ে কাজ করলে প্রয়োজনে ভবনটি ভেঙে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ নিয়ে এসে ভবনটি নতুন করে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর তদন্ত টিম ও ফায়ার সার্ভিস তিনটি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করলেও সে বিজ্ঞপ্তি সরিয়ে দিয়ে প্লাস্টারিং ও মেরামত কাজ চলছে। অগ্নিকান্ডে  ওয়াহিদ ম্যানশনের নিচতলা ও দোতলার ১০টি পিলার সক্ষমতা হারায় বলে উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে। তাই ভবনটি কতটুকু ব্যবহার উপযোগিতা হারিয়েছে ও কতটুকু মেরামত করা সম্ভব বা আদৌ পুরনো অবস্থায় ফেরানো সম্ভব কিনা, তা জানতে ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং এসেসমেন্ট (ডিইএ) করে সে অনুযায়ী মেরামত করে তার ‘রিট্রোফিটিং সার্টিফিকেট’ গ্রহণ না করা পর্যন্ত ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মত দেন রাজউক কর্মকর্তারা। কিন্তু কোনো নিয়ম না মেনেই নিচতলার সব পিলারের ওপর প্লাস্টার করে দোকান ভাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন ভবনের মালিক। এমনকি ডিইএর জন্য যে পরামর্শক কোম্পানিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা রাজউকের কোনো অনুমোদন নেয়নি বলে জানা গেছে। এদিকে, ৯ তলা পর্যন্ত নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া ওয়াহিদ ম্যানশনে আগুন লাগার পর তার পিলারগুলোর চারতলাই ধরে রাখার শক্তি হারিয়েছে। তারপরও ডিইএ না করে রিট্রোফিটিং সার্টিফিকেট ছাড়া দুর্বল ভিতের ওপর নতুন ইট বসানোয় যে কোনো সময় তা ভেঙে পড়তে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তদন্ত কমিটির সদস্য ও বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, বিল্ডিংয়ের ১০ কলামের অবস্থা খারাপ। এগুলো মজবুত না করে বিল্ডিং ব্যবহার করা যাবে না। আমি যতটুকু জেনেছি- রাজউক এবং সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছাড়াই সংস্কার কাজ শুরু করেছে। রাজউক জানায়, ভবন মেরামতে কোনো অনুমতি নেয়নি কেউ। তবে ঝুঁকি বাড়লে ভবনটি ভেঙে দেওয়া হবে।ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন্স ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, মূলত আমরা ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কিনা তা পরির্দশন করি। আর ভবন ব্যবহারের অনুমোদন রাজউক দিয়ে থাকে। তবে ওয়াহিদ ম্যানশনের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ হেলালী জানান, তারা এখন পর্যন্ত কোনো অনুমোদন নেয়নি। ওই ভবনে অথরাইজড অফিসারকে পাঠানো হয়েছে। তিনি তাদের নোটিসও করেছেন। প্রসঙ্গত, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনে ৭০ জন নিহত হন।

সর্বশেষ খবর