সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জ ভিন্নপন্থিদের আটকানো

আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান আজ শুরু

রফিকুল ইসলাম রনি

প্রায় দুই বছর বিরতি দিয়ে আজ থেকে আবার শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান। প্রথম বারের মতো যারা ভোটার হয়েছেন ও নারীদের প্রাধান্য দিয়ে দলটি সদস্য সংখ্যা বাড়াবে। এবারের টার্গেট দুই কোটি নতুন সদস্য। দলটির নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানে ভিন্নপন্থিদের আটকানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন দলীয় নেতারা। জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২০ মে গণভবনে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও একজন তরুণ আইনজীবীকে সদস্য করে দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বছর জুন-জুলাই পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহ করা হলেও পরে তা থমকে যায়। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের কারণে সদস্য সংগ্রহ করা হয়নি। আগামী অক্টোবরে দলের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে নতুন সদস্য সংগ্রহ করার তাগিদ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ১ জুলাই থেকে দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ করা হবে। অনেক নবীন এবার নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে। এর মধ্যে ক্লিন চরিত্রের যারা আছে, আমরা তাদের নতুন সদস্য করব। অন্য দল থেকে আগত কাউকে সদস্য করার ব্যাপারে দলের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। সাধারণত রক্তের সম্পর্কের ব্যাপারটা বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের ছেলে-মেয়ের বিষয়টি গুরুত্ব¡ দিয়েই দেখব। যাকে সদস্য করা হবে তার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা, ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে কি না, কোনো সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কি না, সে বিষয়গুলো দেখা হবে। সূত্রমতে, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসায় তৃণমূলে বিভক্ত বাড়ছে আওয়ামী লীগে। কোথায়ও এমপি বনাম নেতা, কোথায় নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে। সবাই চায় নিজ নিজ দল ভারী করতে। নিজস্ব বলয় ভারী করতে ইতিমধ্যে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন নৌকায় উঠেছে। শুধু নৌকায় চড়েননি, তারা এখন দলের হর্তাকর্তা সেজে গেছেন। এমপি-নেতাদের চারপাশে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা ভিড়তে পারেন না। তৃণমূলের নেতারা আশঙ্কা করছেন, এবার সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নিজ নিজ দল ভারী করতে ভিন্নমতের ব্যক্তিদেরকেও দলে ভেড়ানো হতে পারে। মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেয়ে আমরা সদস্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছি। তিনি বলেন, অনেক আগেই স্থানীয় সংসদ সদস্যের হাত ধরে জামায়াত-বিএনপির অনেক নেতা আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে। তারা নৌকায় এসে এখনো নৌকার বিরোধিতা করছে। তারা সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঘায়েল করবে। এদের দল থেকে বের করে দেওয়া আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সবার জন্য আওয়ামী লীগের দরজা খোলা। যে কেউ আওয়ামী লীগ করতে পারবে। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে আমরা কখনোই আপস করব না। স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের কাউকে দলে ভেড়ানো হবে না। জানা গেছে, স্থানীয় এমপি ও তাদের অনুসারী নেতাদের দাপটে ক্লিন ইমেজধারীদের সদস্য করা যাবে কিনা তা নিয়ে অনেকটা চালেঞ্জ হিসেবে দেখছে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। নিজ দল ভারী করতে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় ভিন্নপন্থিদের দলের ঢোকানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ সদ্য সমাপ্ত হওয়া উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক জায়গায় এমপি বনাম দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। অনেক এমপি সরাসরি নৌকার বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছেন। সংসদ নির্বাচনে নৌকায় চড়ে এমপি হয়ে উপজেলার ভোটে নৌকা ডুবিয়েছেন। এবার সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নৌকাবিরোধী ওইসব বিতর্কিত অনুপ্রবেশকারীদের কমিটি থেকে বাদ দিয়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে রাজনীতিতে যুক্ত আছে তাদের নিয়ে আসা হবে এমনটাই মনে করছে তৃণমূল। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সব ইউনিটের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো ভেঙে পরিচ্ছন্ন ও দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের দিয়ে নতুন কমিটি গঠন অনেকটাই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভোটের মাঠে সংসদের নৌকাবিরোধী ভূমিকা ও নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব এখনো দৃশ্যমান। বিগত দিনে তাদের নেতৃত্ব নিয়ে মারামারি ও খুনোখুনির ঘটনাও ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর