সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

আজ থেকে গ্যাসের দাম বাড়ছে

এক চুলা ৯২৫, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোক্তা পর্যায়ের সর্বস্তরে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের গ্রাহকদের জন্য নতুন করে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর ফলে এখন থেকে বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের জন্য প্রতি মাসে এক বার্নারের চুলা ৯২৫ টাকা আর দুই বার্নারের চুলার জন্য ৯৭৫ টাকা গুনতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সিএনজিচালিত যানবাহন, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ উৎপাদন (ক্যাপটিভ পাওয়ার), সার কারখানা, শিল্প, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাণিজ্যিক ব্যবহার ও চা-বাগানে ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে। গড়ে সব খাতে এবার ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ হারে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিইআরসি কর্তৃপক্ষ জানায়, আজ ১ জুলাই থেকে গ্যাসের নতুন দাম কার্যকর করা হবে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিইআরসি কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এই ঘোষণা দেন। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিইআরসি কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলনে জানায়, কমিশন গ্যাস বিতরণ কোম্পানিসমূহের আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চলতি বছরের ১১ থেকে ১৪ মার্চ গণশুনানির আবেদন করে। গ্যাসের উৎপাদন, এলএনজি আমদানি, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয় এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বিইআরসি আইন, ২০০৩-এর ধারা ২২(খ) ও ৩৪-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার ভোক্তা পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণ করেছে। এর ফলে আজ থেকে তিতাস, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, কর্ণফুলী, সুন্দরবন ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর আগে বাসা-বাড়ির গ্রাহকদের গ্যাসের এক বার্নারের চুলার জন্য ৭৫০ টাকা এবং দুই বার্নারের চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হতো। নতুন করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে আবাসিকে ব্যবহৃত গ্যাসে ১৭৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া গৃহস্থালিতে নতুন করে মিটারভিত্তিক গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার করা হয়েছে ১২ টাকা ৬০ পয়সা। আগে গৃহস্থালির মিটারভিত্তিক গ্যাসের মূল্য ছিল ৯ টাকা ১০ পয়সা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিএনজিচালিত যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা। সিএনজি ব্যবহৃত যানবাহনে আগে গ্যাসের এই মূল্য ছিল ৪০ টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের নতুন মূল্য ৪ টাকা ৪৫ পয়সা। আগে এ মূল্য ছিল ৩ টাকা ৬১ পয়সা। ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাসের নতুন মূল্য ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা, আগে ছিল ৯ টাকা ৬২ পয়সা। সার কারখানায় গ্যাসের নতুন মূল্য ৪ টাকা ৪৫ পয়সা, আগে ছিল ২ টাকা ৭১ পয়সা। এ ছাড়া শিল্প-কারখানা গ্যাসের নতুন মূল্য ১০ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়েছে, যা আগে ছিল ৭ টাকা ৭৬ পয়সা। আর চা-বাগানে নতুন মূল্য ১০ টাকা ৭০ পয়সা, যা আগে ছিল ৭ টাকা ৪২ পয়সা। এ ছাড়া বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হোটেল ও রেস্টুরেন্টের জন্য প্রতি ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ টাকা। আর ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের জন্য গ্যাসের দাম আগে যা ছিল তাই আছে। অর্থাৎ ১৭ টাকা ০৪ পয়সা। প্রসঙ্গত, চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে গড়ে ১০২ ভাগ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। কোম্পানিগুলো গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির জন্য তাদের আবেদনে আমদানিকৃত এলএনজির উচ্চমূল্যের কথা উল্লেখ করে। আমদানি করা এলএনজির প্রতি হাজার ঘনফুটের মূল্য ১০ ডলার বা ৮২০ টাকা (প্রতি ডলার ৮২ টাকা হিসাবে)। অন্যদিকে দেশে উৎপাদিত প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১২ টাকা ১৯ পয়সা। চলতি মার্চ মাসে এ নিয়ে গণশুনানি করে কমিশন। শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে দামের বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার নিয়ম। সর্বশেষ ২০১৭ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর