মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোগান্তি বাড়বে

জিন্নাতুন নূর

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোগান্তি বাড়বে

গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ পড়বে। বেড়ে যাবে জীবনযাত্রার ব্যয়। বাড়বে বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুতের দাম, পণ্য উৎপাদন ব্যয় ও পরিবহন ভাড়া। সাধারণের আয় তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি না পাওয়ায় অতিরিক্ত এই মূল্য দিতে গিয়ে তারা হিমশিম খাবেন। একই সঙ্গে সরকারের ভ্যাট আহরণ কমায় রাজস্ব আয় অর্জন নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। সব মিলিয়ে জীবনযাত্রার এই ব্যয় বৃদ্ধিতে এক ধরনের সামাজিক অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কে এই অভিমত ব্যক্ত করেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করায় গ্রাহকদের ওপর সরাসরি চাপ তৈরি হবে। কল-কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে পরিবহন ব্যয়। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের দামও বেড়ে যাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ পড়বে। এ ছাড়াও বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি ‘দুষ্টচক্র’ তৈরি হয়েছে। তবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত অপরিহার্য ছিল না। যারা এলএনজি ব্যবসা করেন এবং ঋণখেলাপি তাদের সুবিধা দিতেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে পরিবহন খাতে ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। শিল্পজাত পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে বিদ্যুতের দামও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন তিনি। কৃষকরা বর্তমানে তাদের উৎপাদিত পণ্যের পর্যাপ্ত দাম পাচ্ছেন না। আর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্য উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সারের মূল্য বৃদ্ধিও জড়িত। আর সারের মূল্য বৃদ্ধি পেলে সরকারকে সারের জন্য বাড়তি ভর্তুকি দিতে হবে। দাম বৃদ্ধির জন্য শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো যদি পর্যাপ্ত গ্যাস না পায় সেক্ষেত্রেও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। বেসরকারি শিল্প খাতে সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বললেও শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব পড়বে। পণ্য উৎপাদন করতে না পেরে শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোতে উল্টো জনবল ছাঁটাই করা হতে পারে। এর প্রভাব গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের কষ্টে উপার্জিত অর্থে ক্রয়ক্ষমতা কমবে। সরকারের ভ্যাট আহরণ কমবে। এমনকি সরকারের পক্ষে রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব হবে না। আর আগামীতে এই সংকট মোকাবিলা করা সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি পরিবহন খাতের ওপর পড়বে। প্রতিবার দেখা যায় যে, দেশে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে জ্বালানি তেলের দামও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করার মতো  মেকানিজম আমাদের দেশে এখনো গড়ে ওঠেনি। এরই মধ্যে আমাদের কাছে খবর এসেছে যে ঢাকার বাইরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া রাখছেন। আমদানিকৃত এলএনজির দাম সমন্বয় করতে গিয়ে সরকার সিএনজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সিএনজিচালিত যানবাহনে এই দাম বৃদ্ধি যৌক্তিক নয়। যারা ব্যক্তিগত গাড়িতে সিএনজি ব্যবহার করেন তারা এই দাম বৃদ্ধিতে সামান্য মনোক্ষুণœ হলেও গণপরিবহনের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম সামান্য বৃদ্ধি পেলেও এর বড় ধরনের প্রভাব সাধারণ যাত্রীর ওপর পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হন বাস মালিকরাও।

বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি যে, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক মালিক তাদের বাস থেকে সিলিন্ডার খুলে আবার তেলে ফিরে গেছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করায় নিত্যপণ্য, যাতায়াত, বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে সবকিছুর খরচই বৃদ্ধি পাবে। এতে জনগণের মাথাপিছু খরচও তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্য আরেক দফা উসকে দেওয়া হয়েছে। আর সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর