মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

নদী রক্ষায় ১৭ দফা নির্দেশনা হাই কোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক

নদী বা জলাশয় দখলকারী বা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীরা ব্যাংক ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না। ইউপি থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যন্ত কোনো ধরনের নির্বাচনে প্রার্থীর বিরুদ্ধে নদী দখল বা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ থাকলে তাকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তুরাগ নদকে ব্যক্তি-আইনি সত্তা বা জীবন্ত সত্তা  ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন ১৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রায়ে বলা হয়, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সব নদ-নদী জীবন্ত সত্তা (লিগ্যাল/জুরিসটিক পারসন) অর্থাৎ দেশের একজন নাগরিকের মতোই সাংবিধানিক মর্যাদা পাবে। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ৩ ফেব্রুয়ারি এই রায় দেয়। গতকাল সংশ্লিষ্ট দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ২৮৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে হাই কোর্ট বলে, আমাদের দেশের সব নদীকে রক্ষা করার সময় এসেছে। যদি তা না করতে পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ নদীর বাঁচা-মরার ওপর বাংলাদেশের অস্তিত্ব জড়িত। বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ, বাঁচবে প্রিয় বাংলাদেশ। গত বছর তুরাগ নদ রক্ষায় মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে হাই কোর্টে একটি রিট দায়ের করে। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এ বছর ৩ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট রায় ঘোষণা করে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সংগঠনের সভাপতি আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। নদী ও জলাশয় দখল বন্ধ করতে রায়ে ১৭ দফা প্রতিরোধমূলক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়ের অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করে তাদের নামের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করা। নদী বা জলাশয় দখলকারী বা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীরা ব্যাংক ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না। ঋণ দেওয়ার সময় আবেদনকারীর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইউপি থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যন্ত কোনো ধরনের নির্বাচনে প্রার্থীর বিরুদ্ধে নদী দখল বা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ থাকলে তাকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি দুই মাসে কমপক্ষে একদিন এক ঘণ্টা ‘নদী রক্ষা, সুরক্ষা, দূষণ প্রতিরোধ’ বিষয়ে সচেতনতামূলক ক্লাস নিতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রণালয় এ নির্দেশনা বাস্থবায়ন করবে। দেশের সব শিল্প কারখানার সব শ্রমিক কর্মচারীর অংশগ্রহণে প্রতি দুই মাসে এক দিন এক ঘণ্টা সচেতনতামূলক সভা বা বৈঠক করতে হবে। দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা ও বিভাগে প্রতি তিন মাসে একবার নদী বিষয়ে দিনব্যাপী সভা-সমাবেশ করতে হবে। নদ-নদী সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নদী কমিশনকে সঠিক এবং যথাযথ সাহায্য-সহযোগিতা দিতে বাধ্য থাকবে। রায়ে বলা হয়, আগাম প্রতিরোধের নীতি এবং দূষণকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদানের নীতি আমাদের দেশের আইনের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হলো।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, নাব্য সংকট ও বেদখলের হাত থেকে নদী রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানবজাতি সংকটে পড়তে বাধ্য। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সরকার আইন প্রণয়ন করে নদীকে বেদখলের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। নদী রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে জাগরণ শুরু হয়েছে। এখন সবারই ভাবনা-পরিবেশের জন্য নদী রক্ষা করতে হবে।

বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী চার নদ-নদী রক্ষার বিষয়ে রায়ে হাই কোর্ট বলে, ঢাকার আশপাশে বহমান চার নদী রক্ষায় আদালত আগেও নানা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু সেসব রায়ের নির্দেশনার সঠিক বাস্তবায়নে বিবাদীরা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তা নেওয়া হলে তুরাগ নদ রক্ষায় হাই কোর্টে আরেকটি মামলা করার প্রয়োজন হতো না। শুধু যে তুরাগ নদ আক্রান্ত তা নয়, প™§া, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৪৫০টি নদী অবৈধ দখলদারদের দ্বারা আক্রান্ত।

সর্বশেষ খবর