বুধবার, ৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরেনি

১৩০ পয়েন্টে থামে না বাস, এলোমেলো যাত্রী ওঠানামা যানজটের অন্যতম কারণ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ ও মাহবুব মমতাজী

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরেনি

যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা বন্ধ হয়নি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরেনি। গাড়ি চলে চালকের ইচ্ছামতো। তাই যাত্রী ওঠানামাও নিয়মের মধ্যে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আর ট্রাফিক আইন অমান্য করায় গত কয়েক দিনে রাজধানীতেই লক্ষাধিক মামলা হয়েছে। রাজধানীর ১৩০ পয়েন্টে বাস থামার স্থান নির্ধারণ করা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। খুব কম বাসই আছে নির্ধারিত স্থানে থামে। যে কেউ হাত উঁচু বা ইশারা করলেই বাসে ওঠা যায়। সড়কে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েও যত্রতত্র পথচারী পারাপার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। শুধু নিজেদের সুবিধামতো চলাচল করতে রাজধানীর অনেক স্থানে সড়ক দ্বীপের কাঁটাতারের বেড়া কেটে ফেলা হয়েছে। কেটে দেওয়া হয়েছে স্টিলের বেড়াও। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয়ে অনেকে বাসে ওঠেন। যাত্রী নিরাপত্তায় বিমানবন্দর সড়কে রোড ডিভাইডারের ওপর দেওয়া হচ্ছে স্টিলের বেড়া। এ বিবেচনায় পথচারীদের বেপরোয়া আচরণও বন্ধ হয়নি।

অথচ বিআরটিএ ও মহানগর ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান চলমান রয়েছে। ২৫ জুন পর্যন্ত এ মাসে ১৫ দিনে পুলিশের অভিযানে এক লাখ ৪ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ দিনে মামলা হয়েছে ছয় হাজারের বেশি। অভিযানে ডাম্পিং করা হয়েছে তিন শতাধিক গাড়ি। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ট্রাফিক আইন অমান্য ও উল্টোপথে গাড়ি চালানোয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ১৩ জুন উল্টোপথে চলায় এক হাজার ৫৭ মামলা, ১৫ জুন একই অপরাধে এক হাজার ২৪৩, ১৭ জুন একই অপরাধে এক হাজার ৭৪৯টি মামলা হয়। ২২ জুন ৭ হাজার ২০৯টি মামলা ও ৩১ লাখ ৭৮ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়াও অভিযানকালে ৩৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৭৬৩ গাড়ি জব্দ করা হয়। ২৩ জুন মামলা হয়েছে ৭ হাজার ৭১৯টি। এ সময় ডাম্পিং করা হয় ২৯টি গাড়ি। ২৪ জুন ৭ হাজার ৭৬৪টি মামলা হয়। ৭৩টি গাড়ি ডাম্পিং করা হয়। ২৫ জুন ৭ হাজার ৭১৫টি মামলা হয় এবং ৪৯টি গাড়ি ডাম্পিং করা হয়।  সরেজমিন দেখা গেছে, বাস স্টপেজ নির্মিত হলেও সেখানে গাড়ি থামা নিশ্চিত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ভূমিকা নেই। রাজধানীর বাসাবো, বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, মতিঝিল, খিলক্ষেত, বিজয়নগর, র‌্যাডিসন হোটেলের সামনে, মহাখালীসহ বিভিন্ন স্পটে নির্ধারিত স্থানে বাস না থামতে দেখা গেছে। 

পুলিশ বলছে, মামলা ও জরিমানায় এ সংকটের সমাধান হবে না। এ জন্য জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক সভার আয়োজন করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় পথসভা, সচেতনতামূলক পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম চলছে। সড়কের বাঁ পাশের লেনে হলুদ রং দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করা। এর মাঝখানে লেখা রয়েছে বাস থামবে। কোথাও বাংলা কোথাও ইংরেজিতে লেখা। আর ফুটপাথ ঘেঁষে রয়েছে ‘বাস থামবে’ লেখা সংবলিত সাইনবোর্ড। সঙ্গে আধুনিক যাত্রী ছাউনি। ডিএমপির পক্ষ থেকে এসব বাস থামানোর স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (সিএএসই) শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে আধুনিকমানের বসার স্থান নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অথচ ৫০টির বেশি পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামে না। চালকের ইচ্ছামতো এখনো বাস চলাচল করে খোদ রাজধানীতে। বেশির ভাগ বাসই জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর যাত্রী ওঠানামা করে। যেখানে ইচ্ছা থামানো, যাত্রী উঠানো, দুই বাসের রেষারেষি এখনো সড়কের নিয়মিত চিত্র। গত বছরের ২৯ জুলাই হোটেল র‌্যাডিসনের সামনে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে জাবালে নূর পরিবহনের বাস চাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশের প্রতিটি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। দেশব্যাপী নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবি ব্যাপক মাত্রা ছড়ায়। এ ঘটনায় নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই হস্তক্ষেপ করেছিলেন। নিরাপদ সড়কের জন্য দেওয়া হয়েছিল ২৩ দফা নির্দেশনা। তবে পরিবহন মালিক ও চালকদের আইন পালনে বাধ্য করতে পুলিশকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। জানা গেছে, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ থেকে নগরীতে বাস স্টপেজ নির্মাণের জন্য দুই সিটি করপোরেশনকে ১৪০টি স্থান চিহ্নিত করে দেওয়ার বিষয়ে এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে দক্ষিণে ৭০ এবং উত্তর সিটিতে ৭০টি স্থান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর