বুধবার, ৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডেঙ্গু ঝুঁকিতে দক্ষিণ সিটি বছর বছর বাড়ছে রোগী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডেঙ্গু ঝুঁকিতে দক্ষিণ সিটি বছর বছর বাড়ছে রোগী

চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছে রিবা (৮)। আস্তে আস্তে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন রিবার বাবা-মা। পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসক। ভর্তির এক দিন পার হতেই রক্তের প্লাটিলেট কমে গেলে রক্ত দিতে হয়েছে রিবাকে। তবে এখন রিবার পরিস্থিতি অনেকটা ভালো বলে তার অভিভাবককে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। প্রতিবছরই রাজধানীতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। তবে ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ৩ থেকে ১২ মার্চ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৭টি ওয়ার্ডের ১০০টি জায়গায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু নিয়ে জরিপ করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৮টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬২টি স্থানে জরিপ পরিচালনা করা হয়। ডিএনসিসির ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৪০ শতাংশ, ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ শতাংশ, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ শতাংশ, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ শতাংশ স্থানে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত করা হয়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ৮০ শতাংশ, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ৭০ শতাংশ, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৪০ শতাংশ, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৩ শতাংশ, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ, ৪৩ নম্বরে ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ জায়গায় এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত হয়েছে। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বেশি জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এ জন্য এই এলাকায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই জরিপটা শুষ্ক মৌসুমে করায় তুলনামূলক কম লার্ভা পাওয়া গেছে। এখন বর্ষা শুরু হওয়ায় এডিস মশার প্রজনন এবং আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়বে। তাই এখনই সচেতন না হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫ জন। গত মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৬৬ জন। এ বছর জানুয়ারি মাসে ৩৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ৪৪ জন, মে মাসে ১৩৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়। তবে এ বছর এপ্রিল থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ডেঙ্গু জ্বরে দুজন মারা গেছেন। জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৫৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ এপ্রিল তিনি মারা যান। এ ছাড়া আজগর আলী হাসপাতালে গত ২৮ এপ্রিল ভর্তি হয়ে ৩২ বছর বয়সী এক যুবক ২৯ এপ্রিল মারা যান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়। এ বছরও জুন থেকে বেড়েছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ১৪৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৬ জন। ২০১৭ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৭৬৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ জন। এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, প্রতিবছরই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। জনসচেনতা ও দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রচার থাকলেও নেই কার্যকারিতা। রাজধানীতে প্রতিবছরই থাবা বসাচ্ছে ডেঙ্গু। তবু সচেতন হয়নি রাজধানীবাসী। বদ্ধ জলাশয়ে বংশবিস্তার করছে প্রাণঘাতী এডিস মশা। মশার বংশবিস্তার রোধে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম, পরিচ্ছন্নতা তদারকিতে নাগরিক কমিটি করলেও কমেনি রোগের প্রকোপ। বরং প্রতিবছর কয়েকগুণ বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এ ব্যাপারে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক ও প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ডেঙ্গু সময়ের বেশ আগেই দেখা দিয়েছে। গত বছরই ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। তবে এবার সেই বদলে যাওয়া লক্ষণে আরও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এবার হেমোরেজিক ডেঙ্গু একদমই কম। তিনি আরও বলেন, আগে যেমন তীব্র জ্বর এবং প্রচ- শরীর ব্যথা থাকত, এবারের ডেঙ্গুতে জ্বর তীব্র না, শরীর ব্যথাও উল্লেখযোগ্য না। এ ছাড়া র‌্যাশও কম পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোকে ডেঙ্গুর অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা হতো। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সমন্বিত কার্যক্রম নেওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন এই চিকিৎসক।

 

সর্বশেষ খবর