বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

নিরাপত্তায় বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ

বিমান নৌবন্দরে আধুনিক স্ক্যানার, শুল্ক স্টেশনে জিরো টলারেন্স

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম

নিরাপত্তায় বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ

দেশের সব বন্দরেই নজরদারি বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্র ও নৌবন্দর, আইসিডি এবং শুল্ক স্টেশনে বাড়ছে নিরাপত্তা। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকার অনুসরণ করছে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি। মডার্ন বডি স্ক্যানিং থেকে শুরু করে লাগেজ-ব্যাগেজ কনটেইনার স্ক্যানিং, নারকোটিকস ডিটেকশন ও লিকুইড ইন্সপেকশন পর্যন্ত সবই করা হবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে ইনল্যান্ড ডিপো পর্যন্ত প্রবেশ ও বহির্গমন পথের কোথাও আর দৃষ্টি এড়ানোর সুযোগ থাকবে না। এই লক্ষ্যে প্রায় ১১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিচ্ছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দেশের একাধিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অস্ত্র ও গুলিসহ অনুপ্রবেশ, ইয়াবাসহ মাদক চালান, সমুদ্রবন্দরে মাদক ও ঘোষণার অধিক পণ্য এবং মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানিসহ নানা কায়দায় বিপুল শুল্ক ফাঁকির চেষ্টায় নিকট ও দূর অতীতের আলোচিত ঘটনাগুলো সুখকর নয়। তা ছাড়া জঙ্গি সন্ত্রাসবাদী তৎপরতায় বিশ্বজুড়ে চলমান নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রতিকার করার মধ্য দিয়ে ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রগুলো জানায়। কাস্টমস কমিশনার-আপিল (ঢাকা-২) কাজী মুস্তাফিজুর রহমান  জানান, এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই জমা পড়বে প্রকল্প প্রস্তাব। ‘নন ইনট্রুসিভ ইন্সপেকশন (এনআইআই)’ মেশিন স্থাপন প্রকল্প নামে এই প্রকল্পের আওতায় সবকটি বন্দর ও শুল্ক স্টেশন হবে আরও অধিক নি-িদ্র নিরাপদ। মালামাল পরিবহনের সব অনিয়মও দূর হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রায় চূড়ান্ত বলে জানালেন প্রস্তাবনা তৈরির দায়িত্বে থাকা এই কাস্টমস কমিশনার। চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারের দায়িত্ব পালন শেষে সম্প্রতি ঢাকায় বদলি হন এই কাস্টমস কর্তা। চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে তিনি রেখে গেছেন উল্লেখযোগ্য সাফল্যের ছাপ। বিশেষ করে বন্ড লিকেজ কমাতে কাজ করেন তিনি। ভুয়া ফ্যাক্টরিগুলোর বন্ড সুবিধা প্রাপ্তি ঠেকাতে বন্ডের মালামালের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সমন্বয়ের চেষ্টা করে যান তিনি। কাস্টমস কমিশনার কাজী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, কাস্টমস-সিকিউরিটি প্রকল্পটির আওতায় দেশের সবকটি শুল্ক স্টেশন, আইসিডি, নৌ, বিমান ও সমুদ্রবন্দরে স্থাপন করা হবে  অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। ২০০-এর অধিক নানা ধরনের যন্ত্রপাতি সংযুক্ত হবে। আড়াই বছরের মধ্যে এই প্রকল্প কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের এমন উদ্যোগে স্বস্তির নিঃশ্বাস এসেছে যেন বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ‘চট্টগ্রাম বন্দর’র ব্যবহারকারী  ফোরামের প্রধান ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম সরকারি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। এটি বেশ ‘ইতিবাচক’ ও এতে দেশের ভাবমূর্তি ‘আরও বাড়বে’ বলে মনে করেন তিনি। বিজিএমইএর পোর্ট অ্যান্ড শিপিং স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘দেশের বন্দরের আন্তর্জাতিক মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এমন নিরাপত্তা প্রচেষ্টা সহায়ক হবে। এ জন্য নতুন করে কোন চার্জ আরোপ না হলে এটি সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য হবে’ বলেও মনে করেন বিজিএমইএর সাবেক এই প্রথম সহসভাপতি। সরকারি সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩টি সমুদ্রবন্দর, ১টি নৌবন্দর, ১টি আইসিডি, ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ৩৬টি শুল্ক স্টেশন রয়েছে। এর সবগুলোতেই অর্থাৎ ৪৪টি পয়েন্টের সবকটি পর্যায়েই স্থাপন হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই নিরাপত্তাব্যবস্থা। অত্যাধুনিক বডি স্ক্যানার থেকে শুরু করে কনটেইনার স্ক্যানার, এমনকি লিকুইড ও নারকোটিকস ডিটেক্টরসহ সব ধরনের নিরাপত্তা ও যাচাই সরঞ্জাম সংযুক্ত হচ্ছে এই কাস্টমস সিকিউরিটি প্রকল্পটির আওতায়।

সর্বশেষ খবর