বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে ভয়ঙ্কর বন্ড চোরাকারবারিরা

১২৫ কোটি দুর্নীতি, গচ্চা আরও ১২৪ কোটি টাকা

রুহুল আমিন রাসেল

ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে বন্ড চোরাকারবারিরা। এই খাতে চাঞ্চল্যকর অনিয়ম, দুর্নীতি ও চোরাচালানের তথ্য মিলেছে চট্টগ্রামে। ফলে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্প, আরেক দিকে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। জানা গেছে- শুল্কমুক্ত পণ্য আমদানি সুবিধা বন্ডেড ওয়্যার হাউসের আড়ালে ১২৫ কোটি টাকার অনিয়ম- দুর্নীতি ধরা পড়েছে। কাস্টমস হাউসের ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ ও পণ্য খালাসে অসহযোগিতা এবং অহেতুক জটিলতায় গচ্চা গেছে আরও ১২৪ কোটি টাকার রাজস্ব। চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিয়মিত বন্ড প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিদর্শন ও নজরদারির কারণে অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়েছে। চোরাচালান ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স নীতির কারণে ৬১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১২৫ কোটি টাকার অনিয়ম উদঘাটন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে কালোবাজারে হাত বাড়ালেই মিলছে বন্ড সুবিধার পণ্য সামগ্রী। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী শুল্কমুক্ত বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধার পণ্য কালোবাজারে বিক্রিতে জড়িত। এসব অনিয়ম ধরা পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের তৎপরতায়। সংস্থাটি অনিয়ম, দুর্নীতি ও চোরাচালানের দায়ে গত এপ্রিল ও মে মাসে চট্টগ্রামের ৩২টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স স্থগিত করে আর বাতিল করে ৫টির। তবুও থামছে না বন্ডের অবৈধ ব্যবহার। দেদার চলছে জালিয়াতির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থ পাচার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৫টি বড় ধরনের বন্ড জালিয়াতির কারণে বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর বাইরে আরও অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে। লাইসেন্স স্থগিত ও বাতিলের তালিকায় থাকা ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় অনেক পোশাক কারখানা রয়েছে।

তথ্যমতে, চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের অধীনে প্রায় ১ হাজার ৪৫০টি বন্ড লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে সক্রিয় বন্ড প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। এর মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্প খাতে ৬৫০টির মতো বন্ড প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর এক্সেসরিজ খাতে আছে ৩৫০টির মতো প্রতিষ্ঠান। এ প্রেক্ষাপটে বিগত ২০১৮- ২০১৯ অর্থবছরের চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা যেখানে ৫১৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ছিল, সেখানে আদায় হয়েছে ৩৯৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ, ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা রাজস্ব গচ্চা গেছে। এ সম্পর্কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরে পাঠানো এক ব্যাখ্যায় অতিসম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটর বলেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে রাজস্ব আদায় করে নিচ্ছে। জটিলতাও সৃষ্টি করা হচ্ছে। ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ ও পণ্য খালাসে অসহযোগিতা করা হচ্ছে। আবার ব্যাংক গ্যারান্টি ফেরত প্রদানে কৃত্রিম দাফতরিক জটিলতা তৈরি করে শুল্কায়ন নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্ডে রাজস্ব আদায় খাত একেবারে কম। কেবলমাত্র হোম কনজাম্পশনের ১২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে রাজস্ব বেশি আদায় হয়, স্টিল খাতে। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ এই বন্ড কমিশনারেটের ৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাস, জুলাই ২০১৮ থেকে মে-২০১৯ পর্যন্ত ২৫৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা সরাসরি আদায় করে নিয়েছে। অথচ ওই টাকা চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে আদায় করা হলে মোট রাজস্ব আদায় হতো ৬৫২ কোটি ৮ লাখ টাকা। যা বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৫১৮ কোটি টাকার চেয়ে অনেক বেশি। এদিকে সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে নগরীর ডি টি রোডের আসকারাবাদ এলাকার আজমাইন ফ্যাশনের বন্ড সুবিধায় ২৭ হাজার ৪০০ কেজি শতভাগ পলয়েস্টার ফ্রেবিক্স খোলা বাজারে বিক্রির সত্যতা পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির কথা লিখিতভাবে স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় রাজস্ব ফাঁকির মামলা চলমান রয়েছে। অপরদিকে নগরীর উত্তর কাট্টলীর সেন বাড়ি রোডের জাস এক্সসরিজ লিমিটেড বন্ড সুবিধায় ৮১ হাজার ৭০৩ কেজি কাগজ জাতীয় পণ্য ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রি করেছে বলে তথ্য মিলেছে। এই অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির মামলা দায়ের করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশরারেট।

 

সর্বশেষ খবর